গল্পটা ভালোবাসার
বৃষ্টিতে ভিজ্ছি............................................
সন্ধ্যা থেকে বৃষ্টি হচ্ছে।
বৃষ্টিতে ভিজ্ছি,আমি আর বাধন।একটু ঠান্ডা লাগলেও জানুর
সাথে বৃষ্টি তে ভিজার মজাই
আলাদা।
বাধনের সাথে আমার পরিচয় ২০১১
সালে।নতুন কলেজে উঠেছি।
কলেজে ফার্স্ট ক্লাস।হঠাৎ
করে চোখ পরে আমার পাসের
বেঙ্চের উপর।নিজের
চোখকে বিশ্বাষ
করতে পারছিলাম
না যে এতোসুন্দর
মেয়ে কোথাথেকে আসলো এখানে।
ক্লাস শেষে আমি মেয়ে টার
কাছে যাই,মেয়েটার
সাথে কথা বলতে চাচ্ছিলাম,কিন্ত
সাহস পাচ্ছিলাম না।সেদিন আর
কথা বলা হলো না।বাসায়
ফিরে আসি।রাতে বাধন কে সপ্ন
দেখি।
তারমানে প্রেমে পরে গেছি।
যে ভাবেই হোক বাধন কে অফার
করতে হবে কালকে,মনে মনে ভেবে নিলাম।
কিন্তু সে গুড়ে বালি।
কলেজে গিয়ে শুনি অলরেডি তার
পিছনে লাইন আছে।
মনে মনে ভাবলাম এতো লোকের
ভিতর বাধন তার সত্যি কারের
ভালবাসা খুজে নিতে পারবে না।
তাই আর বলা হলো না।কিন্তু
কিছুদিন পর বাধনের সাথে আমার
বন্ধুত্ব গড়ে উঠে।লেখাপড়ার
কথা ছাড়া আমাদের মাঝে অন্য
কনো কথা হত না।কিন্তু আমি আর
সহ্য করতে পারছিলাম না।একদিন
সকালে আমি বাধন কে ফোন দেই।
-হ্যালো
-হ্যা,বাধন তুই কই?
-বাসায়,ক্যানো কি ব্যাপার?
-তুই একটু কফিহাউজে আয়।
-আমি তো একটু ব্যাস্তো....ওকে
আসছি।
আজ ণীল একটা শারি পরেছে ও।খুব
দারুন লাগছে ওকে।
-কি জন্য
এতো জরুরি তলব,বলতো এবার,প্রেমে পরেছিস
নাকি?
-হুমম।
-মেয়েটা কে?
আমি কিছু সময় চুপ
করে থেকে উত্তের টা দিলাম।
উত্তর টা শুনে ও আমার মুখের দিক
চেয়ে বলতে লাগলো
-তোর মত একটা আনস্মার্ট ছেলের
সাথে আমি।অসম্ভব।তুই
ভালো করে জানিস
সৌরভ,আমি আলিফ
কে ভালবাসি।তোর চেয়ে স্মার্ট
সে।so তুই পথ মাপতে পারিস
এখন,আর শোন আমাকে কোনো সময়
আর ফোন দিবি না।
আমি ওর কথাগুলো শুনে থ
মেরে গেলাম।নিজের কান
কে বিশ্বাষ করতে পারছিলাম
না।ওকে কিছু না বলেই
আমি চলে আসলাম।কিছুদিন পর
আমার রেজাল্ট আউট হয়।
ঢাকা এসে ভার্সিটিতে এডমিশন
নেই।কিছুদিন পর আলিফের
সাথে দেখা হয় হাতিরঝিলে।ওর
মুখে শুনি যে ওদের ব্রেকআপের
কথা।
হঠাৎ আম্মি অসুস্থ হয়ে পরায় আমার
মোল্লাহাট ফিরে আসতে হয়।
সে দিন সেই
কফিহাউজে বসে ফ্রেন্ড দের
সাথে আড্ডা দিচ্ছিলাম।হঠাৎ
একটা ফোন আসে।ফোনটা রিসিভ
করতেই আমার বুকটা কেপে উঠলো।
-হ্যালো,সৌরভ একটু সময় হবে তোর
কাছে?
আমার গলাটা কাপছিলো
-বাধন তুই এতোদিন পর....
-একটু ভিতরে আয়।
আমি দেরি না করে কফি হাউজের
ভিতরে গেলাম,
দেখলাম বাধন বসে আছে সেই
ণীল শাড়ী পড়ে।আমি গিয়ে ওর
সামনে বসতেই ও বলতে লাগলো..
-আমি তোকে অনেক কষ্ট
দিয়েছি না?
আমি ওর মুখের
দিকে চেয়ে বল্লাম
-হঠাৎ এমন এমোন মনে হলো কেন
তোর?
-এ জীবনে চলতে চলতে আমি পথ
হারিয়ে ফেলেছি,আমাকে তুই
পথ টা চিনিয়ে দিবি?
আমি ওর মুখের দিকে চেয়ে আছি।
দেখলাম একফোটা অশ্রু ওর চোখের
কোণ বেয়ে ঝড়ে পরলো।মানুষ
মিথ্যা বল্লেও চোখের
পানি কোনদিন মিথ্যা বলেনা।
আমি ওর হাতটা ধরে বল্লাম
-
আমি আগে তোরি ছিলাম,এখোনো তোর
আছি,আর যতদিন বাচবো শুধুই তুই
থাকবি আমার জীবনে।
ও আমাকে বললো
-অনেক স্মার্ট হয়ে গেছিস
দেখি!"
-তোর জন্য।
তারপর তো সবাই জানেন।
দোয়া করবেন আমাদের জন্য।
ছোট্ট চায়ের দোকান......
রবিন বসে আছে ছোট্ট চায়েরদোকানের সামনে।রহমান চাচার
চায়ের দোকান।অনেক
ভালো চা বানায় রহমান চাচা।
তাই প্রতিদিন একবার হলেও
এখানে আসে রবিন।
রাস্তার বিপরীত পাশে রংপুর
গার্লস স্কুল।এই স্কুলে পড়ে রুহি।
এবার এসএসসি পরীক্ষার্থী রুহি।
রবিন অবশ্য এইচএসসি ১ম বর্ষে পড়ে।
রুহিকে অনেক
ভালোবাসে রবিন।কিন্ত
কোনদিন বলা তো দূরের
কথা,রুহির সামনেও
যেতে পারে নি সে।শুধু চায়ের
দোকানে বসে দূর
থেকে দেখে যায় ও!
রুহি অবশ্য ব্যাপারটা লক্ষ করেছে।
কিন্তু এগুলোতে মন দেয় না সে।
রবিনকে দেখলে আড়ালে চলে যায়
দ্রুত।তখন নিজেকে খুবই
বোকা মনে হয় রবিনের।
আজ তারাতারি চায়ের
দোকানে এসেছে রবিন।মনের
কথা রুহিকে বলবে বলে পূর্ণ
প্রস্তুতি নিয়ে এসেছে ও।
হাতে একগুচ্ছ লাল গোলাপ
নিয়ে অপেক্ষা করছে রবিন।
ছুটির ঘন্টা বাজতেই সবাই বের
হতে লাগল।একটু পরেই
রুহি এসে দারালো রাস্তায়।
বুকে সাহস সঞ্চয়
করে ধীরপায়ে গিয়ে সামনে দারালো রবিন।
বলল,একটা বলব তোমায়,একটু শুনবে?
রুহি চোখ বড় করে তাকাল রবিন এর
দিকে।ফুলগুলো বাড়িয়ে দিল
রবিন।হাটু গেরে বসে পড়ল
সামনে।কিন্তু কিছু বলার
আগে কে যেন টাস করে একটা চর
বসিয়ে দিল রবিনের গালে।রবিন
দেখতে পেল,চলে যাচ্ছে রুহি।আর
সামনে পড়ে আছে কয়েকটা লাল
গোলাপ।
অনেক কষ্টে উঠে দারায় রবিন।
ফিরে আসে....
রহমান চাচা এখনো চা বানায়।
কিন্তু রবিন এখন আর আসে না।
হয়তো আর কখনো আসবে না রবিন।
কয়েকদিন
থেকে রুহি দেখতে পায়
না রবিনকে।মনে মনে খোঁজে ও।
কিন্তু রবিন হারিয়ে যায় যেন
হঠাৎ করেই।আর
এসে অপেক্ষা করে না স্কুলের
সামনে।
শুধু রাস্তায় পিষ্ট হয় কয়েকটা লাল
গোলাপ।আর
বাতাসে ভাসে একটা চরের শব্দ।
টাস.............
ভাইয়া তুই আমাকে লাভ করিস........?
-কুত্তা কুত্তা কুত্তা ।
পচা।
-ঐ পিচ্চি লাভ মানে কি?এত ছোট বয়সেই
পাইক্কা গেছস
আমাকে বিয়ে দেবে বলছে ।
-থাম থাম মাকে ডাকিস না।
-ওকে।তবে বর কিন্তু ডাক্তার হওয়া চাই
তা না হলে বিয়ে করব না।
-আ।এই মেয়ে বলে কি?
আমি কথা বলছিলাম আমার কিউট সাত বছর
বয়সী বোনটার সাথে।তার নাম মায়া।
আল্লাহ মনে হয় সব মায়া দিয়ে তাকেই
সৃষ্টি করেছে।
আমি তাকে মায়াবতী বলে ডাকি।
ইদানিং খুব বেশীই
জ্বালাতন করছে।খালি এখানে যাব
ওখানে যাব।এটা খাব ওটা খাব।খুব
বিপদে আছি তাকে নিয়ে ।
কয়েক দিন আগের ঘটনা।
আমি ছাদে বসে সিগারেট খাচ্ছিলাম।
হঠাত পায়ের শব্দ কে যেন ছাদে আসছে।
সিগারেটটা পিছনে লুকিয়ে।
-ভাইয়া ভাইয়া আম্মু ডাকছে।
-তুই যা আমি আসছি।
-ভাইয়া তোমার পিছন
থেকে ধোয়া বেরুচ্ছে কেন?
-কই নাতো তুই যা।
-ও বুজেছি।তুমি সিগারেট খাচ্ছো।দাড়াও
আম্মুকে বলছি।
-প্লিজ মায়া আম্মুকে বলিস না।
-না বললে কি দিবা।
-তর কি লাগবে।
-এত্তগুলো কিটক্যাট,অনেক ট্যাডি আর
একটা সিগারেট
হি হি হি।
-খুব দুষ্ট হয়েছিস তাই না।
কয়েক ঘন্টা পড়ে আবার আমার
সাথে ঝগড়া করে মায়া আব্বু
আম্মুকে বলে দেয় আমার
সিগারেট খাওয়ার কথা।ফলস্বরূপ আব্বুর
বিশাল বকা।
সেদিন রাগ করে বেশ জোরেই মায়াটার
গালে একটা থাপ্পর মেরেছিলাম।
থাপ্পর মারার পর নিজের কছে নিজেরই খুব
খারাপ
লাগল।বুকের মধ্যে হু হু করে উঠল।
মনে হলো আমি মানুষ
না।মানুষ হলে কি আর এত কিউট
একটা মেয়ের গালে এত
জোরে মারতে পারি।
একদিন পর
-আমার মায়াবতীটা কইরে।দেখো তোমার
জন্য কিটক্যাট আর ট্যাডি আনছি।
-লাগবে না যাও ভাগো।
-(কান ধরে)আর আমি আমার
বোনটাকে মারব না।
-তুমি খুব পচা।
-ওকে আমাকেও একটা মারো।
-(আমার গালে চুমু দিয়ে) তুমি আমার
ভাইয়া যে।
-সেদিন ওকে অনেকখন
জড়িয়ে ধরে কেদেছিলাম।
-(আমার চোখের পানি মুছে দিয়ে)
ভাইয়া কাদছো ক্যান??
-কই নাতো।
-তুমি কাদলে আমিও কিন্তু কাদবো।
-আচ্ছা।চল তকে নিয়ে আজ চিড়িয়াখানায়
যাব।
-(হাতে তালি দিয়ে,আমাকে আরেকটা চুমু
দিয়ে)
ভাইয়া তুমি খুব ভাল।
-যা আম্মুকে বলে রেডি হ।
বার বছর পর
মায়াটা অনেক বর হয়ে গেছে।ছোট্ট
মায়া কবে যে বড় হয়ে গেল বুঝতেই
পারলাম না। আজ মায়ার বিয়ে।
হ্যা ডাক্তার পাত্রর সাথেই।
বরের বাড়িতে যাওয়ার সময় মেয়েটা হাউ
মাউ
করে আমার বুকে মাথা দিয়ে
কাদছিল।আমারও যে কম কষ্ট হচ্ছিল
তা না।হাজার হলেও
তো আমি তার বড় ভাই।
তাকে একটু হাসানোর জন্য আমি তার
কানের কাছ মুখ নিয়ে বললাম...
-তর মেকাপ কিন্তু চোখের পানিতে নষ্ট
হয়ে যাচ্ছে । আর কাদিস না।
বুজতে পারলাম না মেয়েটা এই
কথা শুনে আরও হাউ মাউ
করে কেদে উঠল।
আরও চার বছর পর
সবাই চিন্তিত মায়াটা হাসপাতালে...
একটু পরে ডাক্তার এসে যে নিউজটা দিল
তা শুনে আমি দুই হাত লাফিয়ে উঠলাম...
আমি মামা হয়েছি।অর্থাত
আরেকটা মায়ার সৃষ্টি।
প্রথম ইউনিভার্সিটি
-তুই।
-ভাইয়া তুই আমাকে লাভ করিস না।তুই খুবপচা।
-ঐ পিচ্চি লাভ মানে কি?এত ছোট বয়সেই
পাইক্কা গেছস
দাড়া আজি তোর বিয়ে দিয়ে দেব।
-মা ভাইয়া আমাকে পিচ্চি বলছে?আরআমাকে বিয়ে দেবে বলছে ।
-থাম থাম মাকে ডাকিস না।
-ওকে।তবে বর কিন্তু ডাক্তার হওয়া চাই
তা না হলে বিয়ে করব না।
-আ।এই মেয়ে বলে কি?
আমি কথা বলছিলাম আমার কিউট সাত বছর
বয়সী বোনটার সাথে।তার নাম মায়া।
আল্লাহ মনে হয় সব মায়া দিয়ে তাকেই
সৃষ্টি করেছে।
আমি তাকে মায়াবতী বলে ডাকি।
ইদানিং খুব বেশীই
জ্বালাতন করছে।খালি এখানে যাব
ওখানে যাব।এটা খাব ওটা খাব।খুব
বিপদে আছি তাকে নিয়ে ।
কয়েক দিন আগের ঘটনা।
আমি ছাদে বসে সিগারেট খাচ্ছিলাম।
হঠাত পায়ের শব্দ কে যেন ছাদে আসছে।
সিগারেটটা পিছনে লুকিয়ে।
-ভাইয়া ভাইয়া আম্মু ডাকছে।
-তুই যা আমি আসছি।
-ভাইয়া তোমার পিছন
থেকে ধোয়া বেরুচ্ছে কেন?
-কই নাতো তুই যা।
-ও বুজেছি।তুমি সিগারেট খাচ্ছো।দাড়াও
আম্মুকে বলছি।
-প্লিজ মায়া আম্মুকে বলিস না।
-না বললে কি দিবা।
-তর কি লাগবে।
-এত্তগুলো কিটক্যাট,অনেক ট্যাডি আর
একটা সিগারেট
হি হি হি।
-খুব দুষ্ট হয়েছিস তাই না।
কয়েক ঘন্টা পড়ে আবার আমার
সাথে ঝগড়া করে মায়া আব্বু
আম্মুকে বলে দেয় আমার
সিগারেট খাওয়ার কথা।ফলস্বরূপ আব্বুর
বিশাল বকা।
সেদিন রাগ করে বেশ জোরেই মায়াটার
গালে একটা থাপ্পর মেরেছিলাম।
থাপ্পর মারার পর নিজের কছে নিজেরই খুব
খারাপ
লাগল।বুকের মধ্যে হু হু করে উঠল।
মনে হলো আমি মানুষ
না।মানুষ হলে কি আর এত কিউট
একটা মেয়ের গালে এত
জোরে মারতে পারি।
একদিন পর
-আমার মায়াবতীটা কইরে।দেখো তোমার
জন্য কিটক্যাট আর ট্যাডি আনছি।
-লাগবে না যাও ভাগো।
-(কান ধরে)আর আমি আমার
বোনটাকে মারব না।
-তুমি খুব পচা।
-ওকে আমাকেও একটা মারো।
-(আমার গালে চুমু দিয়ে) তুমি আমার
ভাইয়া যে।
-সেদিন ওকে অনেকখন
জড়িয়ে ধরে কেদেছিলাম।
-(আমার চোখের পানি মুছে দিয়ে)
ভাইয়া কাদছো ক্যান??
-কই নাতো।
-তুমি কাদলে আমিও কিন্তু কাদবো।
-আচ্ছা।চল তকে নিয়ে আজ চিড়িয়াখানায়
যাব।
-(হাতে তালি দিয়ে,আমাকে আরেকটা চুমু
দিয়ে)
ভাইয়া তুমি খুব ভাল।
-যা আম্মুকে বলে রেডি হ।
বার বছর পর
মায়াটা অনেক বর হয়ে গেছে।ছোট্ট
মায়া কবে যে বড় হয়ে গেল বুঝতেই
পারলাম না। আজ মায়ার বিয়ে।
হ্যা ডাক্তার পাত্রর সাথেই।
বরের বাড়িতে যাওয়ার সময় মেয়েটা হাউ
মাউ
করে আমার বুকে মাথা দিয়ে
কাদছিল।আমারও যে কম কষ্ট হচ্ছিল
তা না।হাজার হলেও
তো আমি তার বড় ভাই।
তাকে একটু হাসানোর জন্য আমি তার
কানের কাছ মুখ নিয়ে বললাম...
-তর মেকাপ কিন্তু চোখের পানিতে নষ্ট
হয়ে যাচ্ছে । আর কাদিস না।
বুজতে পারলাম না মেয়েটা এই
কথা শুনে আরও হাউ মাউ
করে কেদে উঠল।
আরও চার বছর পর
সবাই চিন্তিত মায়াটা হাসপাতালে...
একটু পরে ডাক্তার এসে যে নিউজটা দিল
তা শুনে আমি দুই হাত লাফিয়ে উঠলাম...
আমি মামা হয়েছি।অর্থাত
আরেকটা মায়ার সৃষ্টি।
দুইতরী
জীবনের
হিসেবগুলো বড্ড
মিলাতে কষ্ট
হচ্ছে মিরার। বিছানার
উপর
শুয়ে সামনে একটা বই ,বই
এর পাতা উল্টাচ্ছে বাট
পড়ছে জীবনের স্মৃতির
পাতা ।
যখন প্রথম
ইউনিভার্সিটি ভর্তি হয়
।প্রথম ক্লাসে প্রচন্ড
ভয়ে ভেয়ে ছিলো মিরা ।
ক্লাস রুম
থেকে বেরুতে গিয়ে হঠাত্
করে সেন্ডেলের
ফিতা ছিরে পরে যাই ,সবাই
হাসছিলো বাট
একটা মমতামাখা বন্ধুত্বের
হাতের উপর নির্ভর
করে দাড়িয়েছিলো সে ।
ছেলেটির নাম লিমন ।
এর পর থেকে মিরার
সীট ,নোট আর সবকিছু
সংগ্রহ করতো লিমন ।
ভালোই চলছে বন্ধুত্ব ।
প্রতিদিন
একসাসে ক্যানটিনে খাওয়া ,রিক্সায়
ঘোরাঘুরি আর
খুটিনাটি বিষয়
নিয়ে ঝগড়া ।
হঠাত্ করে আবির্ভাব হয়
একটা ছেলের নাম
রিয়ান ।এই
ছেলেটা হঠাত্
নেমে আসা বৃষ্টি থেকে মিরাকে রক্ষা করার
জন্য
নিজে ভিজে ছাতাটা এগিয়ে দিলো বলল
মেয়ে মানুষ
ভিজে গেলে প্রবলেম ।
তারপর ছাতা ফেরত
দেওয়া ,রোজ রোজ
একসাথে ভার্সিটি যাবার
জন্য পরিচিত মোড়টাই
অপেক্ষা করা ,পেনড্রাইভে নুতুন
মুভি দেওয়া আর
সারাদিনে পাঁচবার
ফোনে পেত্নি বলে ডাকা ।
হঠাত্ করে লিমন কেন
যে আমায় প্রপোস করলো ।
আমাকে ছারা ও
নাকি থাকতে পারবে না ।
আসলে এটা ওর ভুলই
ছিলো আসলে আমি রিয়ানের
সাথে মিশেছি তাই ও
আমায় প্রপোজ
করছে হিংসায় ।কিন্তু ও
এটা নিয়ে খুব বেশিই
বারাবারি করছে ।
হঠাত্ করে রিয়ানের
ফোন এলোঃ
রিঃ হ্যালো পেত্নি একি শুনছি লিমনের
প্রেমে নাকি তুই হাবুডুবু
খাচ্ছিস ।
|
মিরাঃ শোন ,লিমন
একটা পঁচা ছেলে ও
বন্ধুত্বের সম্মান
রাখতে জানে না তুই ও
ওর সাথে কথা বলবিনা ।
|
রিয়ানঃ ওকে পেত্নি ।
|
মিরাঃ মুখ
ভেঙ্চিয়ে যাহ দৈত্য ।
এভাবে চলতে থাকে মিরা আর
রিয়ানের বন্ধুত্ব ।বেশ
অনেকদিন ।
এরি মাঝে মিরার
চোখের কোনে কোন
ব্রান্ডের কাজল ,চুলের
কয়টা ব্যান্ট
আছে ,মিরা কোন
ড্রেসের সাথে কোন
জুতা - কানের দুল
পরে সব মুখুস্ত রিয়ানের
।
এইতো সেদিন ওর
হাতঘড়িটা নষ্ট
হলো রিয়ান
সারিয়ে আনলো তারপর
সেদিন ওর
বাসা থেকে বকাঝকা করছে সারারাত
রিয়ানের কাছে কল
দিয়ে কেঁদে কেঁদে কথা বললো ।
হঠাত্ করে রিয়ানের কল
এলো এই পেত্নি এখন
কিন্তু প্রচন্ড মশার
উপদ্রপ
মশারি টাঙ্গিয়ে ঘুমাস
আর রাতে যেন ক্রীম
ডলতে ভুলিস না ।
মিরাঃ দোয়া করি ,তোর
একটা ব নিগ্রোদের মত
বউ হই। তখন বুঝবি !
হঠাত্ করে একদিন
মিরা লিমনের
সাথে কথা বলে একটা নোটস
এর বিষয়ে ,রিয়ান
সেটা দেখে খুব কষ্ট
পায় ।
হঠাত্ রিয়ান
মিরাকে প্রোপজ
করে কারন
সে মিরাকে হারালে বাঁচবে না ।
খুব
ভালোবেসেফেলেছে মিরাকে ।
মিরাঃ দেখ রিয়ান
আমি তোকে বন্ধু
ভাবি আর তুই ও লিমনের
মত ...
আমি এটা এক্সপেক্ট
করি নাই ।আমার
সাথে আর তুই যোগাযোঘ
রাখিস না ।
এখন মিরা রোজ
একাএকা ভার্সিটি যাই
চুপচাপ বসে থাকে বাট
নিজের
ইগোটাকে ধরে রাখার
জন্য
একবারো রিয়ানকে ডাকে না ।
এই একাকিত্বের সুযোগ
নেই লিমন ।আবার সেই
হেল্প সেই রিক্সায়
ঘোরা ।কিন্তু এর
মাঝে কোথায়
যেনো একটা অপূর্নতা থেকে যাই
মিরার।
আসলে মিরা লিমনের
প্রতি এক ধরনের
মানুষিক
প্রতিশ্রুতিতে বদ্ধ ।
যেখানে ভালোলাগা নেই
তবে কিছুটা দ্বায়িক্ত
আছে ,সামান্যতম
ভালোবাসা আছে তবে আকাশ
সমান নিজের
আত্নঅহমিকা আছে ।
রিয়ানকে বিভিন্ন
কারনে ভূল
বোঝে এদানিং মিরা ,যেমন
ভেঙ্গে যাওয়া চুলের
ব্যান্ট টা তুলে রাখার
অভিযোগে ,মোবাইলের
ওয়ালপেপারে ওর ইমেজ
রাখার
অভিযোগে ইত্যাদি ইত্যাদি ।
মিরা বুঝতে পারে যে ও
রিয়ানকেই
ভালোবাসে কিন্তু ও এখন
লিমনের কাছ
থেকে ফিরে যাবার
কি উপায় আছে ?আর
রিয়ানের এই কষ্ট ও
মেনে নিতে পারছে না ।
এ কেমন দোটানা ?
মিরা আজ
কাঁদছে খুব ,নিজের
জেঁদের কাছে নিজের
ভালোলাগার
কাছে হেরে যেয়ে ।
নিজেকে দোষি দেখে ।
রিয়ান গোপন সূত্রে সব
জানতে পারে ।কিন্তু
রিয়ান কিভাবে মিরার
কাছে যাবে ,না মিরার
এই
দোটানা থেকে মুক্তি দেবার
জন্য নিজেই সরে যাবে ?
বুঝে উঠতে পারে না ।
আরে নাহ আপন
ভালো পাগলেও বোঝে ।
লিমন আর মিরা এখন
পার্কে
___এই পেত্নি তুই কি তোর
ঐ ঠোটের এই
লিপ্স্টিকটা নুতুন
নিয়েছিস ।
মিরাঃ মাসখানেক
আগে ,কেন ? এত প্রশ্ন
কেন তোর ?
রিঃ না মানে খুব
ইচ্ছে হচ্ছে ?
মিরাঃ চোখ
রাঙ্গিয়ে কি ?
রিঃ মানে ঐটা প্লিজ!
মিরাঃ তোর এই
অপরাধে ,টানা তিনদিন
হরতাল কথা না বলার ।
রিঃ না না ,যদি হরতাল
দিস আমি এখনি পার্ক
থেকে চলে যাব ।
মিরাঃ তুই যাস
না ,আমি রাজি ।
তবে লিপ্স্টিক
উঠে গেলে তখন ?
ব্যাগে তো আর লিপ্স্টিক
টেনে আনি নি ।
রিঃ কিছুক্ষন
পর ,আসলে লিপ্স্টিক
বাদেই
তোকে ভালো দেখাচ্ছে ।
এরপর থেকে লিপ্স্টিক
ব্যাবহার করা বাদ দে ।
কারন এর
পার্শপ্রতিক্রিয়নাই
আমার প্রবলেম
হতে পারে ।
মিরাঃ (লজ্জা পেয়ে)
তাতে আমার কি ? তোর
প্রবলেম ।এখন
থেকে সস্তাটা লাগাবো যাতে বেশি পার্শপ্রতিক্রিয়
ার
ভয়ে তোর বায়না কমে ।
রিঃ প্রবলেম নেই আমার
ঘাম মোছা রুমাল
আছে না ?
(.....আর
হে লিমনকে যে মিরা ভালোবাসেনা সেটা মিরাই
বলেছিলো মেসেজে ।
লিমন প্রথমে যদিও একটু
কেঁদেছিলো এখন ঠিক
হয়ে গেছে কারন
দুইজনের জীবনের
চেয়ে ,একজন এর
কিছুটা কষ্ট ,উত্তম নয়
কি ?.....)
-হুম। কেমন আছো?
-ও ও , তুমি!!! ভাল।
-জানতে চাইবা না আমি কেমন
আছি?
-কেমন আছো?
-
আসলে কি বলবো,আমাকে অনেকটাই
ভুলে গেছো।
-হুম। এখন আমি সব কিছু
ইচ্ছে করে ভুলে যাই।
আসলে ভুলে যাওয়াই ভাল।
আশাটা যখন নিরাশা হয়ে যায়,তখন
মানুষ একটু অন্য মনস্ক হয়ে যায় ,
ত্রিভুবনে কি হচ্ছে, তা খেয়াল
থাকে না। হয়তো বা আমার সেরকম
কিছু হয়েছে।
মানুষকে কখনো পুরোপরি আপন
করতে নেই, আমার মানুষের কাছ
থেকে কিছু
আশা করতে নেই,নতুবা অনেক কষ্ট
পাওয়া যায়।" তার কথা আমি তখন
বিশ্বাস করিনি,আজ তাই সত্যি হল।
-ওও তাই, শ্রভ্র। তোমার
কাছে আমি ক্ষমা চাবো না, কারন
আমি সেই যোগ্যতা হারিয়েছি।
-আজ পর্যন্ত যারা আমাকে কষ্ট
দিয়েছে অথবা আমার সাথে খারাপ
ব্যবহার করেছে, তাদের
আমি ক্ষমা করে দিয়েছি। তাই
তুমি ক্ষমা নিয়ে চিন্তা করো না।
ক্ষমার জন্যে এতদূর না আসলেও
পারতে।
-না, আমি ক্ষমার জন্যে আসিনি।
শুধু দেখতে এসেছি তুমি কেমন
সুখে আছো? বউ-বাচ্চা নিয়ে অনেক
সুখে আছো বুঝি? তোমার
বাবুটা দেখতে অনেক সুন্দর বুঝি?
-সুখ!!! অনেক সুখে আছি। আর বিয়ে!
এই জগতে সবাই চাইলে ও স্বার্থপর
হতে পারে না।
আচ্ছা নীলা তোমাকে একটা প্রশ্ন
করবো? আমাকে কেন ভালবাসলে।
আমিতো তোমাকে ভালবাসতে বলিনি।
তোমিই তো আমাকে প্রথম
ভালবাসতে বলেছিলে। তবে কেন
তুমি আমার সাথে এরকম করলে?
তুমি না বলেছিলে,ভালবাসা
এক
সুখে ঘেরা স্বর্গ, পবিত্রতার বন্ধন।
কেন এটাকে কলঙ্কিত করলে?
বিয়ে করনি কেন?
আমাকে অনেক ভালবাসতে বুঝি?
আসলে আমি অনেক স্বার্থপর।
মেয়েরা অনেক স্বার্থপরই হয়।
অামি পারিনি সেদিন আমার
বাবাকে মৃত্যুর মুখে ফেলে তোমার
হাত ধরে পালিয়ে যেতে। আমি বড়ই
স্বার্থপর।
-কি হয়েছিল তোমার বাবার?
-বাবার ব্লাড ক্যান্সার ছিলো।
ডা্ক্তার বলেছিলো বড়জোড় তিন
মাস বাচবে। আমি বাবাকে খুব
ভালবাসতাম। মা আমার
কাছে এসে হাতাজোড় করে বললো,
তোর বাবার শেষ ইচ্ছে,
তোকে আকাশের
সাথে বিয়ে দিতে চায়।
আমি বললাম,সম্ভবনা,
কারন আমি শ্রভ্রকে প্রচন্ড ভালবাসি।
তোর বাবা প্রচন্ড অসুস্থ,ডাক্তার
বলছে, তাকে কোন রকম মানুষিক কষ্ট
না দিতে। না হয়,সব
আশা নিরাশা হয়ে যাবে। তুই
রাজি হয়ে যা মা, তোর বাবার
দিকে চেয়ে। আমি সেদিন আমার
সুখের কাছে আমার
বাবাকে বিসর্জন দিতে পারিনি।
তাই আমি আকাশকে বিয়ে করেছি।
-আসলে তোমার দোষ নাই। সবই
নিয়তি। ভাগ্যের নিমর্ম পরিহাস
আমাদের সাথে ঠাট্টামি করেছে।
কি আর বলবো,
শুনেছি বিধাতা নাকি, মানুষের
অমঙ্গল চান না। হয়তো বা এতেই
কল্যাণ নিহিত।
-হয়তো বা।
-হুম,নীলা। কেমন কাটছে বিবাহিত
জীবন? অনেক সুখ না।
-বিবাহিত জীবন! খুব সুখে আছি।
আদর্শগত দিক দিয়ে ছেলে অনেক
সৎ-নিষ্ঠাবান একজন পুলিশ
অফিসার ছিল।
আশা করে ছিলাম,তোমার
না পাবার ধবল
হয়তোবা কাটিয়ে ওঠতে পারবো।
কিন্তু
পারিনি,বিধাতা আমাকে সে সুখ
দেয়নি। আসলে এই
অভাগী যেদিকে যায়,সেদিকেই
সাগর শুকায়।
-কেন, কি হয়েছে?
সেদিন ছিল,রবিবার,বিরো ধী দলের
৪৮ ঘন্টা হরতাল। আমাদের বিয়ের
রাত। রাত ১০টা। আকাশ যখন বাসর
ঘরে ঢুকলো,তখন হঠাৎ ফোন আসলো।
ফোন শেষে , আকাশ বলল,"
আমাকে এখনই
যেতে হবে,একটা লোক খুব
বিপদে পড়েছে। আমি ১ ঘন্টার
মধ্যে আসতেছি।" আর কোন খবর
পাইনি,দীর্ঘ দুইমাস পর
সে এসেছিলো ঠিকই, কিনতু জিবিত
না ,মৃত। আসলে বিধাতার বিচার
চিরন্তন,ঠিক। কাউকে কষ্ট
দিয়ে কখনো সুখি হওয়া যায় না।
-সরি,তোমাকে আমি অনেক ভুল
বুঝেছি। আমাকে ক্ষমা করো।
-তুমি ক্ষমা চাচ্ছো কেন? তোমার
কোন দোষ নেই।
-আর বিয়ে হয়নি তোমার,নীলা?
-আকাশ মারা যাবার পর,শ্বুশর
বাড়ি থেকে চলে আসি। তার ১ মাস
পরই বাবা মারা যায়। বাবার
শোকে মা অজ্ঞান হয়ে যায়,
তারপর আর জ্ঞান ফিরে আসেনি।
তারপর পাশের
প্রাইমারি বিদ্যালয়ে একটা চাকরি নেই।
যা মাইনে পেতাম,
তা দিয়ে মিলাকে নিয়ে চলে যায়।
-আমাকে এসব বলনি কেন?
-কি করবো। আমি যে তোমার
কাছে বড়ই অপরাধী। ২টার বছর ধরে,
তোমার কথা প্রতিরাতে মনে হয়,
কাঁদতে কাঁদতে কত রাত পার
করে দিয়েছি। তবুও তোমার
সামনে এসে দাড়াবার সাহস
পাইনি। আর থাকতে পারলাম না।
অাজ মন শক্ত করে চলে এলাম,
তোমাকে একটু দেখবো বলে।
-তোমার মুখটা এত শুকনা কেন?
সকাল থেকে মনে হয় কিছু খাওনি।
চল কিছু খাওয়া যাক।
-আমার ক্ষুধা লাগেনি।
-আরে চলতো।
............
-আচ্ছা শ্রভ্র,আমার
একটা কথা বলতে মন চাচ্ছে। যদিও
সেই অধিকার আমার নেই।
-বল। সমস্যা নাই।
-
আমি কি নতুনভাবে তোমাকে ভালবাসিত
পারি।
-তা হয় না,নীলা। তা হয়না। যে ক্ষত
মোর হৃদয়ে পড়েছে,তা শোকায়নি।
আবার নতুন করে ক্ষত করতে চাও।
-না শ্রভ্র। আমি আর ক্ষত করবো না।
যেই ক্ষত করেছি, তার
অ্যান্টিবায়েটিক
হিসেবে কাজ
করবো।
-না নীলা, আমি আর এখন
মেয়েদেরকে বিশ্বাস করি না।
আমাকে ক্ষমা করো।
কাদছো কেন,অশ্রুটা তোমার প্রধান
হাতিয়ার,তাইনা। কেদে লাভ নাই।
আসলে তোমার কাছ থেকে কষ্ট
পাবার পর থেকে,অনেক
কেদেছি,নিজেকে অনেক
বুঝিয়েছি,নিজেকে
আস্তে আস্তে শক্ত করেছি।
-না কাঁদছি না, চোখে কি যেন
পড়েছে। সরি ,তোমাকে এসব বলার
জন্যে। এখন আসি।
-আচ্ছা, ভাল থেকো।
পারলে ভুলে যেয়ো।
-পারবো না।
(বলে নীলা হাটছে,অজানা এক পথে।
যদিও এ পথে সে কতবার এসেছে।
কিন্তু আজ সেই পথটা বড়
অজানা লাগছে। নীলার
বিষাদমাখা মুখের
পাশাপাশি আকাশটা বড়ই
হাসোজ্জল মুখে একমুঠো রোদ
নিয়ে হাসছে। সবই যেন নীলার
প্রতিকূলে,
নীলাকে সান্তনা দেবার মত কেউ
নেই। আজ আবার শনিবার।
নীলা শোনেছে মানুষের শনিবার
নাকি আবার খারাপ যায়।
আত্মহত্যা করবে, তাও
পারছে না কারন বাড়িতে তার
ছোট বোন মিলা আছে।
নীলা মারা গেলে ওকে দেখবে কে!)
-ছয় দিন পর। আজ শুক্রবার।
(বরাবরের মত, নীলা ফজর নামাজ
পরেছে। সে প্রতিদিনিই আল্লাহর
কাছে,শ্রভ্রর জন্যে মঙ্গল
কামনা করে। আজ সে আল্লাহর
কাছে বলেছে,আল্লাহ
তুমি আমাকে কষ্ট দাও।
কিন্তি শ্রভ্রকে কখনো কষ্ট দিওনা।
আর দুচোখের
কিনারা বয়ে গেছে শুধু অথই জল।)
-নামাজ পড়ে ওঠতেই, কলিং বেলের
চির চেনা সুর।
দরজা খুলতেই,যা দেখলাম
তা কখনো বাস্তবে দূরের
কথা কল্পনায় ও ভাবিনি।
দেখলাম, শ্রভ্রর
হাতে একতোরা গোলাপ আর
রজনীগন্ধ্যা।
সে হাটুঘেরে বসে গিয়ে,আমাকে বলল,"
I Love u too নীলা "
তারপর শ্রভ্রকে জড়িয়ে ধরে, ওর
বুকে মাথা রেখে,অনেকক্ষণ
দাড়িয়ে থাকলাম। অদ্ভুত সেই
অনুভূতি, যার স্বাদ আমি আজ প্রথম
পেয়েছি।
-তারপর একটু পর,শ্রভ্র বললো,"
মেডাম, অনেক হয়েছে। এই নিন,এর
ভিতর একটা শাড়ি আছে। যান
পড়ে আসেন। বাহিরে যাব।"
-আমার না এভাবেই তোমার
বুকে মাথা রেখে থাকতে মন
চাচ্ছে। কোথায় যাবা?
-কাজী-অফিসে যাব। আজ
থেকে ২বছর
আগে,বিয়ে না করে প্রেম করেছি,
তাই তোমাকে হারাতে হয়েছে।
এখন বিয়ে করে প্রেম
করবো ,তবে তোমাকে আর
হারাতে হবেনা। বুঝলা?
-হুম। Good Idea, আসছি, তুমি বস।
..............
পার্কে হাটছি পাশাপাশি দুজন ...
-শুভ্র, আজ না আমার অনেক খুশির
দিন। প্রকৃতিটা ও আজ দারুণ লাগছে।
-হুম। কোমর-অবধি তোমার কর্ণ
পতিত চুলের সাজ দেখে,প্রকৃতি আজ
হয়তোবা কিছুটা হিংসুটে হয়ে ওঠেছে।
এমন
একটা রমনী পাশে থাকলে,প্রকৃতির
দিকে তাকানোর সময় কই।
-হুম, তাই বুঝি। আমার
সাথে ফাইজলামি করতেছো,না!
ফাইজলামি না, সত্যি বললাম।
-হাতটা ধর,আর কখনো হাত
ছারবা না,বুঝলা।
-হুম।......
(এভাবেই চলতে লাগলো শ্রভ্র ও
নীলার সুখে ঘেরা স্বর্গ নামক
ভালবাসার নীড়।
ভালবাসাতো এমন একটা জিনিস
যার কোন সংজ্ঞা নেই, শুধু অনুূভব
করা যায়। বর্তমানে ভালবাসার
অবস্থান খুবই করুণ। ভালবাসা নামক
পবিত্র বস্তুকে , লোভ ও
কামনা নামক ছাইপাশ
দিয়ে করা হচ্ছে পদদলিত,
তা নিয়ে আমি বড়ই টেনসিত।
আমাদের নিজেদের
মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে হবে।
সবাই ভাল থাকবেন।)
অভিমান
মাগরীবের নামাজ পড়ে একটি গছের
শিকড়ে অদ্ভূত
অঙ্গভঙ্গিতে বসে আছে তৈয়ব, এখন
সে নিয়মিতো নামাজ
পড়তে চেষ্টা করে| সে আজ
খালি হাতে বসে আছে, তার
হাতে আজ মোবাইল নেই সিগারেট
ও নেই বুকের ভেতরের
শুন্যতা হাতকে ছুঁয়ে গেলো তাই
হাতটা ও খালি|
হটাত করে পাশ দিয়ে রাজু কোথায়
যেনো যাচ্ছে তৈয়বকে দেখে বলছে কিরে আজ
তো ক্রিকেটে সেন্সুরী মারচোস
পাটি দিবি নাকি? তৈয়ব নিশ্চুপ!
তারপর রাজু নিজেই বললো,
অনেকদিন
হচ্ছে টাকা দিয়া পাটিতে আসিসনা কেনো কাল
পাটি আছে আসিস কিন্তু, তৈয়ব ২০০
টাকা বের করে দিয়ে বললো এই
নে পাটির টাকা রাজু
টাকাটা নিয়া চলে গেলো| এখন
তৈয়বের কাছে টাকা থাকে তৈয়ব
খুব ফালতু হয়ে গেছে বিরধীদলের
যে কোন কর্মসুচিতে অংশ নেয়
এবং একটা চোটখাটো পদ ও
পেয়েছে রাজনৈতিক সংঘঠনের|
এতে মানুষ তাকে খারাপ জানলেও
তাতে কি? নিজের চলাফেরা আর
হাত
খরচাটাতো চলে ওদেরকে পাটির
টাকাটা না দিলে সমস্যা হতো তাই
দিয়া দিলো, পাটিটা এক কথায়
নেশার আসর|
বাসায় যেতে ইচ্ছে হয়না তার,
কেননা বাসায় গেলেই অসুস্থ
বোনের পাগলামো দেখতে হবে,
তার সাথে বেকারত্বের
অভিশাপে মায়ের
বকুনিতো বাধ্যতামূলক! আম্মু
দিনে ২ বেলা খাইয়ে ৪
বেলা বকা দেয়, বকা না দেওয়ার
কোন কারন নেই কেননা, অতি নিন্ম
মধ্যবিত্ত পরিবারের অসুস্থ
বাবা মায়ের একমাত্র ছেলে আর ৪
বোনের একমাত্র
ডিপ্লোমা ইন্জিয়ার ভাইয়ের
বেকার থাকাটা পরিবারের
জন্যে অভিশাপ স্বরুপ|
তাই শীকড় টাতে বসে আছে তৈয়ব
আর ভাবছে এখানে বসে মনের
সাথে কতনা কথা হতো কতনা পাগলামো কতনা অভিমান
আর কতনা ভালোবাসায়
ঘেরা ছিলো সে দিনগুলো| কিন্তু
আজ আর সে নেই তাই মোবাইল
টা হাতে না থাকলেও সমস্যা নেই
কেননা, কেউকে ফোন করবার
তাড়া নেই এখন কেউ রিংটোন
শুনবে এই ভয়ে মোবাইলটা সাইলেন্ট
করে রাখা লাগেনা তাই
মোবালটা ঘরে রেখে এসেছে সাইলেন্ট
না করেই, দরকারি ফোন আসলে ও
আসতে পারে হয়তোবা কোন
কম্পানী থেকে চাকুরীর ইন্টারভিউ
এর খবর জানাবে, তা জানা টাও খুব
দরকার মনে হয়না চাকুরীটা হলেও
কি? এর বেতন দিয়া তৈয়ব তো আর
অতি নিন্ম মধ্যবিত্ত
থেকে মধ্যবিত্ত অথবা উচ্চবিত্ত
হয়ে মনের যোগ্য হতে পারবেনা,
মনকে পাবার শিক্ষাগত বিত্তগত
কিংবা আচরনগত কোন যোগ্যতাই
যে তার নেই| এসব ভাবতে ভাবতেই
তৈয়বের চোখের কোনে কান্নাহীন
জলের ফোঁটা জমে গেছে,
এখন সিগারেট
টানলে হয়তো সিগারেটের রংগিন
ধোঁয়ায় নিজের
কষ্টটাকে কিছুটা হলেও
উড়িয়ে দেওয়া যেতো! কিন্তু এই মদ
গান্জার নেশা যে তৈয়ব
কে মাতাল করে এবং তার সংকীর্ন
মানুষিকতার সাথে যুক্ত
করেছে নোংড়া আচরন, তার পর
থেকেইতো তৈয়ব আজ সবার
কাছে বিরক্তির আর ঘৃনার পাত্র|
যদিও তৈয়বের এসব
নোংড়ামতো সবছেয়ে অপমানিত
হয়েছে সে নিজেই, তারপর
সবছেয়ে নিকৃষ্ট ভাষার তার মন আর
শ্রষ্টাকে আঘাত করে প্রমান
করেছে একটা মানুষ
কতোটা নিছে নামতে পারে|
তাছাড়া আরো কিছু কারনে কোন
এক দিন তৈয়ব সিদ্ধান্ত
নিয়েছে নেশাতো দূরের কথা আর
সিগারেট ও টানবেনা এবং তার
মনের নিষেধ করা কাজ
না করতে সর্বোচ্চো চেষ্ঠা করবে!
তাই আজ হাতে সিগারেট নেই
আছে শুধু বুকের সাথে হাতের গভীর
যোগসূত্র আর তা হলো শুন্যতা|
তবুও তৈয়ব সব দেখে আজ সব কিছু
বুজতে শিখেছে, ব্যাক্তিত্বহীন
তৈয়ব আজ কিছুটা হলেও ব্যাক্তিত্ব
পেয়েছে, যদিও তৈয়ব আজো তার
মনের কাছে ব্যাক্তিত্বহীন
নির্লজ্জ হয়ে বারে বারে পরাজয়
মেনে নিয়ে অপরাধ স্বীকার
করে আত্মসমর্পন করে বলে,
আমাকে ক্ষমা করো তোমাকে ছাড়া থাকতে আমার
খুব কষ্ট হচ্ছে মন
আমাকে তুমি ফিরিয়ে নাও মন
আমি যে আর পারিনা মন|
শীকড় টাতে এখনও বসে আছে তৈয়ব
আর খুব ইচ্ছে করছে মনকে বাসায়
গিয়ে একটা ফোন দিয়ে বলতে মন
আমি গতবছর পারিনি কিন্তু এবার
পেরেছি ক্রিকেটে সেন্সুরী করতে,
কিন্তু মন যে তার ফোন
দরবেনা কারন তৈয়ব
যে ব্যাক্তিত্বহীন নোংড়া আর
অযোগ্য|মেসেজ
করে জানাতে পারতো কিন্তু
যে তৈয়ব প্রত্যেকটা ক্রিকেট ম্যাচ
শেষে ম্যাচের বিবরনী তার
মনকে জানাতো সে আজ
সেন্সুরী করার পর জানানোর সুযোগ
থাকা সত্ত্বেও জানায়নি,
একটা ভয়ে হয়তো মন এখানেও
রিলেশন ব্রেক আপ করার পজেটিভ
দিক খুঁজে নিয়ে ভাববে সম্পর্ক শেষ
হওয়াতে ভালোই হয়েছে, সম্পর্ক
থাকা কালে তৈয়ব
যা পারেনি আজ সেটাই পারছে|
তারপর এশার আযান দিচ্ছে আযান
শেষে গাছ থেকে একটা শুষ্ক
পাতা ঝরে পড়লো, তৈয়ব
ভাবতে লাগলো গাছের
কাছে পাতাটা যোগ্যতা হারিয়েছে তাইতো গাছটি পাতাটিকে ফেলে দিলো,
তারপর
একটা কথা মনে পড়লো নির্বাচনী প্রচারনায়
আমাদের দলীয় পোলাপান কিছুদিন
আগে মিছিল করলো, যোগ্য
প্রার্থী দিলদার ভাই চেয়ারম্যান
পদে তাকে চাই, তখনই তৈয়বের
দৃষ্টি বাস্তবতায় পড়লো আর
নিজেকে বোঝাতে লাগলো,
আমি কিভাবে মনকে পাবার
আশা করি আমিতো মনকে পাবার
প্রার্থী হবারো যোগ্য নই! অতঃপর
তৈয়ব ভাবতে থাকে হয়তো এসব
জন্ত্রনার অবসান হবে নিজের
সন্মান আর
ব্যক্তিত্বকে ফিরে পাবে সে কেননা একটা চাকুরী হতে পারে অতি শীঘ্রই,
চাকুরী জীবন নানাবিধ ব্যাস্ততার
কারনে তৈয়বের জীবন
নিয়ন্ত্রনে চলে আসবে, পরিবারের
কাছে ফিরে পাবে তার
যথাযোগ্যস্থান আর
ভলো রাখতে পারবে পরিবার আর
তার আশেপাশের মানুষগুলোকে,
সবার আনন্দ দেখে চরম
প্রশান্তিতে তৈয়বের
চোখে ফুটে উঠবে প্রকৃত হাসি|
কিন্তু সময়ের
প্রয়োজনে যে চলে গেছে সে কি আসবে ভালোবাসবে?
তৈয়ব আরো ভাবে বাস্তবতায়
তো দেখি কেউ যায় কেউ
আসে এইতো সেদিন রিকু
আরেকটা গার্লফ্রেন্ড
পাল্টালো আর মনকে প্রপোস
করা সাইফের ফেসবুক আইডির ওয়াল
আর পটো গুরে দেখলো সে এখন
আরেকজনের সাথে সম্পর্ক
করছে তখন মনে হয় এটাই বোধহয়
বাস্তবতা এটাই বোধহয় আধুনীকতা!
তৈয়ব এসব ভেবে একটু
মুচকি হাসে যদিও হাসিটার
মানে তৈয়ব ছাড়া আর কেউ
বুঝেনা বুঝবেওনা|এখন আর
সে নেশার রঙ্গিন ধোঁয়ায় কষ্ট
না উড়িয়ে শান্তির পরশে কষ্ট দূর
করতে চায়, তৈয়ব এখন একটাই স্বপ্ন
দেখে আর তা হলো যেভাবে সম্ভব
আশপাশের মানুষ
গুলোকে সুখী করা আর তার মন
ফিরুক আর নাইবা ফিরুক
তাকে আকড়ে ধরেই বেঁচে থাকা,
যদিও
এটা বাস্তবতা বিরুধী তবে একটা কথা মানতে হবে মানুষ
যা করে সেটাই বাস্তবতা আর
তৈয়ব নিজের স্বপ্নকে বাস্তবতায়
পরিনত করবেই তার কারন একটাই
সে তৈয়ব, এবং সে তৈয়ব বলেই
এটা সম্ভব| তারপর তৈয়ব শীকড়ের
মায়া ছেড়ে এশার নামাজ
পড়তে মসজিদে রওনা দিলো
জ্যোৎস্না রাত............
-এই তুমি খালি গায়ে কোথায় যাও!
-ছাদে।
-ছাদে যাবে, তো খালি গায়ে কেন!
-আজ জ্যোৎস্না রাত,দেখছনা?
-দেখবোনা কেন, কিন্তু তাতে কি?
-আমি জ্যোৎস্না স্নান করবো। কাপড়
পরে কি স্নান হয়?
-ফাইজলামি করবেনা আমার সাথে।
চাঁদনী রাতে অনেকেই ছাদে হাটে, ঘর
থেকে বেরোয় কিন্তু
খালি গায়ে জ্যোৎস্না উপভোগ
করে কয়জন?
-কেউ না করলেও আমি করি। আর অন্য
কেউ যে এমন করেনা তার
তো নিশ্চয়তা নেই। লক্ষ কোটি মানুষের
কে কি করে তুমি নিশ্চই জাননা।
-তোমার এইসব উদ্ভট যুক্তি আর
কাণ্ডকারখানা আমার অসহ্য লাগে।
-আমার দেরী হয়ে যাচ্ছে আমি গেলাম।
তুমিও আসতে পার।
-এই যাবেনা বলছি,শুনো।
কিন্তু অন্তু
ততক্ষনে চলে গেছে দরোজাটা খুলেই।
সিঁড়িতে পায়ের আওয়াজ
শুনতে পাচ্ছে সামিয়া। অন্তু আর
সামিয়ার বিয়ে হয়েছে প্রায় বছর
খানেক। এরেঞ্জ ম্যারেজ তাদের।
পেশায় একজন স্কুল শিক্ষক অন্তু।
বাবা মার ইচ্ছাতেই বিয়ে করেছে ওরা।
রীতিমত
ঘটক,কনে দেখা,পানচিনি অনুষ্ঠান সব
হয়েছে। কিন্তু বিয়ের পর থেকেই
সামিয়া লক্ষ করছে অন্তু কেমন যেন
উদাস থাকে। মাঝ রাত্রিতে ঘুম
ভাঙ্গলে অনেক সময় দেখা যায়
বেলকনিতে বসে আছে অন্তু। একের পর এক
সিগ্রেট ফুঁকছে। কখনো দেখা যায়
সামিয়াকে ঘুম
থেকে ডেকে তুলে বলে "এই
সামিয়া আমার ঘুম আসছেনা,গল্প
করি উঠ।"
বাচ্ছা নেয়ার ব্যাপারেও ঘোর
অনীহা অন্তুর। বললেই বলবে"এত অস্থির
হবার কি সামিয়া,সবেতো বিয়ে হলো।
যাকনা কিছুদিন।"
সামিয়া কিছুতেই বের
করতে পারছেনা অন্তুর উদাসীনতার
পিছে লুকিয়ে থাকা রহস্যগুলো।
সামিয়াকে প্রকৃতি তেমন আকৃষ্ট
করতে পারেনা। বৃষ্টি,চাঁদনী রাত
কিংবা গোধুলীর আলো এসব তার
কাছে আহামরি কিছু না কিন্তু অন্তুর
কাছে এসবই মনে হয় জীবন।
ভাবতে ভাবতে সামিয়া উঠে দাঁড়ালো।
দেখে আসতে চায় রহস্যময় স্বামীর
খালি গায়ের জ্যোতস্না স্নান।
ওইতো অন্তু ছাদের দক্ষিন ধারে হাটছে।
এই রকম চাঁদের আলোতে একটা মানুষ
খালি গায়ে হেটে বেরাচ্ছে।
দৃশ্যটা বিধঘুটে। অন্তত সামিয়ার কাছে।
সামিয়া ধীরে ধীরে পা ফেলে অন্তুর
পাশে গেল।
(২)
-অহ তুমি এসেছ,তোমাকে আজ কিছু
জিনিস
দেখাবো যা আগে কখনো বলিনি।
-সব কিছু দেখবো তবে তার আগে তোমার
কাপড় পরতে হবে। এই
স্যান্ডো গ্যাঞ্জিটা গায়ে দাও।
অন্তু অসহায় ভাবে সামিয়ার হাতের
গ্যাঞ্জিটার দিকে তাকিয়ে রইলো।
ছোট বাচ্ছা যেমন তেতো ঔষুধ খাওয়ার
আগে অসহায়ত্ব মুখে ফুটিয়ে তুলে ঠিক
তেমনি।
-না পরলেই কি নয়?
-না।
-ওকে,দাও।
একরকম বাধ্য হয়ে গেঞ্জিটা পরলো অন্তু।
-এবার বলো কি বলবে? সামিয়ার প্রশ্ন।
-ইচ্ছে করছেনা আর সামিয়া।
-না করলে নেই।
-সামিয়া একটা কথা বলবে?
-কি?
-আমাকে কি তোমার পাগল মনে হয়?
-হয়।
-
তুমি আমাকে বিয়ে করে সুখী নও,তাইনা?
-আমি জানিনা অন্তু।
-আমি জানি,আমি সুখী হতে পারিনি।
-কি!
-হে। তোমাকে আমার কিছু বলার আছে।
-কি?
-আমাদের কিছু দিন
আলাদা থাকা উচিৎ।
-তারপর?
-আলাদা থেকে আমাদের একজন
আরেকজন সম্পরকে জানা উচিৎ।
-পিকুইলিয়ার টাইপ
কথা বলছো তুমি অন্তু!
একসাথে থেকে যা হয়নি সেটা আলাদা থেকে কিভাবে সম্ভব?
-সম্ভব।
(২)
-কি করছ সামিয়া?
-বসে বসে বোর হচ্ছি।
-কেন?
-আমার খুব একা লাগছে অন্তু।
-কেন?
-জানিনা।
-আমার মাথায় একটা প্লান
আসছে,শুনবে?
-আগামী কাল তোমার সাথে রমনায়
দেখা করবো!
-কি বলছো এসব?
-যা বলছি তাই।
-কাল বিকাল ৫ টায় তুমি রমনায়
দেখা করবে আমার সাথে। আর এখন খুব ঘুম
পাচ্ছে,কাল সকালে অফিসে গিয়ে সব
খোলে বলবো। এখন রাখি,তুমিও
ঘুমিয়ে পড়।
-আমার ঘুম আসছেনা।
-তাহলে এক কাজ করো,কাল
কি পরবে,কি করবে প্লান করতে থাকো।
আমি ঘুমাই।
-তুমি একটা পাগল, আচ্ছা ঘুমাও।
-ঘুমাচ্ছি,অহ শুনো। কাল বাজারের লিস্ট
দেয়ার দরকার নেই। বাই।
-ওকে,বাই।
কি অদ্ভুত এক সংসার চলছে এখানে। আজ
দশম দিন সামিয়া আর অন্তু কেউ
কারো মুখ দেখেনি। অথচ একই বাসায় একই
ছাদের নীচে বসবাস করছে। এটা অন্তুরই
প্লান। ওদের কেন জানি খিটিমিটি আর
মতবিরোধ লেগেই ছিল। অন্তুর প্লান
হচ্ছে, কিছুদিন আলাদা ঘুমাবে তারা,
কেউ কারো চেহারা দেখবেনা,
সামিয়া একা একাই রান্না করে খাবে,
অন্তু শুধু রাতের খাবারটা বাসায়
খাবে তবে নিজে রান্না করে, বাজারের
প্রয়োজন হলে সামিয়া লিস্ট
দেবে অন্তুকে, কেউ কারো সামনে ভুলেও
আসবেনা। এই অনুপস্থিতি বা অদেখাটাই
নাকি তাদের দূরত্বটা কমাবে। এক জনের
জন্য আরেক জনের
ভালবাসা বা ফিলিংসগুলো বিল্ড আপ
করবে। আর যদি কাজ না হয়
তবে তারা সেপারেশন করবে।
****
-৫ টা বেজে ২০ মিনিট অন্তু। ইউ আর লেট
টু মাচ।
-আর ৫ টা মিনিট প্লীজ,এইতো পৌঁছলাম
বলে।
-
অসহ্য,তুমি আরো আগে রওয়ানা দিলেনা কেন?
একটা মেয়ে এভাবে একা একা বসে থাকতে পারে?
আমার ভয় করছে।
-বললাম তো সরি,অফিস থেকে বের
হতে পারছিলাম না।
এইতো এসে গেছি,ভয়ের কিছু নেই।
আসলে দুজনেরই তর সইছেনা দেখা করার
জন্য। প্রেমিক প্রেমিকার প্রথম
দেখা করার মতোই যেন রোমাঞ্চকর কিছু
এটা। সামিয়া প্রথম থেকেই অন্তুর এইসব
পাগলামীর
বিরোধীতা করে আসছে কিন্তু নিজের
অজান্তেই সেও ফেঁসে গেছে এই খেলায়।
অন্তুর ঠিক যেরকম পছন্দ
তেমনি সেজে এসেছে সামিয়া।
শাড়ী অন্তুর পছন্দ না। কালোর
মাঝে সাদা প্রিন্টের সালোয়ার
কামিজ পরে এসেছে সামিয়া। মাথায়
ওড়না আর কপালের
একপাশে চুলগুলো ফেলে রাখা।
হাতে লাল আর সাদা গোলাপের
একটা ছোট তোড়া। হাতের এন্ড্রয়েড
ফোনের মিররে বার বার
দেখছে নিজেকে কেমন লাগছে?
খুশী হবেতো তাকে দেখে অন্তু? চাকরীর
ইন্টার্ভিউ দিতে গিয়েও হয়তো এত
চিন্তায় থাকেনা কেউ!
মনে প্রাণে প্রার্থনা করছে অন্তু যেন
খুশী হয় তাকে দেখে। বউ তো নয় যেন
প্রেয়সীর টেনশন। প্রেমিককে প্রথম
দেখায় রূপলাবণ্য দিয়ে কপোকাত করার
খেয়াল মনে হচ্ছে। এমন সময় ওর
ফোনটা বেজে উঠলো আবার। অন্তুর
ফোন।
-সামিয়া।
অন্তুর কণ্ঠে কেমন একটা অসহায় সুর
বাজছে।
-হুম বলো,কই তুমি?
-একটা সমস্যা হয়ে গেছে সামিয়া!
এমন কিছুই আন্দাজ করেছিল সামিয়া।
-কি?
-আমি আসতে পারবোনা। তুমি বাসায়
চলে যাও।
-হোয়াট?
সামিয়া কি বলবে ভেবে পাচ্ছেনা।
রাগে দুঃখে সামিয়ার চোখে জল
এসে গেল। এত অপেক্ষা,এত সাধনা করার
পর এটা কি শুনলো সে?
পেটে বাচ্ছা ভেবে আলট্রাসনোগ্রাম
করে টিউমার দেখলেও হয়তো এতটা হতাশ
হতোনা সামিয়া।
-প্লীজ সামিয়া রাগ করোনা,অফিস
থেকে জরুরী ফোন আসলো এই মাত্র। মাঝ
রাস্তা থেকে ফিরে যাচ্ছি তাই।
সমস্যা নেই আমরা আজ বাসায়
দেখা করবো।
-অসম্ভব,কক্ষনো না। আমাদের আর
দেখাই হবেনা। আমি এখান
থেকে সোজা বাসায় যাচ্ছি,বাবার
বাসায়।
রাগে ফেটে পড়লো সামিয়া।
-
সামিয়া পাগলামী করনা প্লীজ,বোঝার
চেষ্টা কর।
-সাট আপ, আর একটাও
কথা বলবেনা তুমি। ফোন রাখলাম আমি।
লাইন কেটে দিয়ে মাথা নীচু
করে পার্কের
বেঞ্চে বসে থাকলো সামিয়া।
ফোটা ফোটা অবাধ্য চোখের জল
মওকা পেয়েই গড়িয়ে পরতে থাকলো।
ফুলের তোড়াটার দিকে চোখ যেতেই
সামিয়ার মনে হলো, লাল
সাদা গোলাপগুলো তাকে যেন উপহাস
করছে। হাতে নিয়েই ছুড়ে ফেলে দিল
ওগুলো। দশটা দিনের আলাদা থাকার
ফলস্বরূপ অন্তুর যে শূণ্যতা তার
হৃদয়ে সৃষ্টি হয়েছিলো সেসবও যেন
ফুলগুলির সাথে দূরে ঠেলে দিল। তারপর
উঠে দাঁড়ালো ফিরে যাবার জন্য।
অভিমানের
স্রোতে ভেসে ভেসে সিদ্ধান্ত নিয়েই
ফেলেছে বাবার বাসায় চলে যাবে।
ঘুরে যেই পা ফেলবে দেখে অন্তু
দাঁড়িয়ে আছে ওর ছুড়ে ফেলা ফুলের
তোড়াটা হাতে নিয়ে।
মুখে মায়া ভরা নিষ্পাপ একটা হাসি।
মানুষটা আহামরী সুন্দর বা স্মার্ট
না কিন্তু তার এই হাসিটা ভূবন
ভুলানো সন্দেহ নেই। ফুল
হাতা একটা আকাশী শার্ট
পরে এসেছে অন্তু, ছোট ছোট চুলে একদম
বাচ্ছা ছেলেদের মতো লাগছে।
সামিয়া কি বলবে বুঝতে পারছেনা।
আনন্দ,রাগ আর অভিমানের মিশেল
তাকে যেন হতবাক করে দিয়েছে।
অশ্রুদের দ্বিগুন উদ্যমে ঢল নেমেছে।
-তুমি একটা শয়তান অন্তু।
এই
বলে দৌড়ে গিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়লো সামিয়া অন্তুর
বুকে।
-আরে আরে করে কি পাগলী! মানুষ
দেখছেতো। মুখ লুকালে হবে নাকি,
আমি আমার সুন্দরী বউটাকে দেখি।
তোমাকে না অসম্ভব সুন্দর
লাগছে সামিয়া।
কথাগুলো সামিয়ার
কানে গেছে কিনা বোঝা গেলোনা,
কারন সে আর অন্তুর বুক
থেকে মাথা তুলছেনা। শরীরের
কাঁপুনি দেখে অনুমান করা যায়
সে কাঁদচে।
জীবনের
হিসেবগুলো বড্ড
মিলাতে কষ্ট
হচ্ছে মিরার। বিছানার
উপর
শুয়ে সামনে একটা বই ,বই
এর পাতা উল্টাচ্ছে বাট
পড়ছে জীবনের স্মৃতির
পাতা ।
যখন প্রথম
ইউনিভার্সিটি ভর্তি হয়
।প্রথম ক্লাসে প্রচন্ড
ভয়ে ভেয়ে ছিলো মিরা ।
ক্লাস রুম
থেকে বেরুতে গিয়ে হঠাত্
করে সেন্ডেলের
ফিতা ছিরে পরে যাই ,সবাই
হাসছিলো বাট
একটা মমতামাখা বন্ধুত্বের
হাতের উপর নির্ভর
করে দাড়িয়েছিলো সে ।
ছেলেটির নাম লিমন ।
এর পর থেকে মিরার
সীট ,নোট আর সবকিছু
সংগ্রহ করতো লিমন ।
ভালোই চলছে বন্ধুত্ব ।
প্রতিদিন
একসাসে ক্যানটিনে খাওয়া ,রিক্সায়
ঘোরাঘুরি আর
খুটিনাটি বিষয়
নিয়ে ঝগড়া ।
হঠাত্ করে আবির্ভাব হয়
একটা ছেলের নাম
রিয়ান ।এই
ছেলেটা হঠাত্
নেমে আসা বৃষ্টি থেকে মিরাকে রক্ষা করার
জন্য
নিজে ভিজে ছাতাটা এগিয়ে দিলো বলল
মেয়ে মানুষ
ভিজে গেলে প্রবলেম ।
তারপর ছাতা ফেরত
দেওয়া ,রোজ রোজ
একসাথে ভার্সিটি যাবার
জন্য পরিচিত মোড়টাই
অপেক্ষা করা ,পেনড্রাইভে নুতুন
মুভি দেওয়া আর
সারাদিনে পাঁচবার
ফোনে পেত্নি বলে ডাকা ।
হঠাত্ করে লিমন কেন
যে আমায় প্রপোস করলো ।
আমাকে ছারা ও
নাকি থাকতে পারবে না ।
আসলে এটা ওর ভুলই
ছিলো আসলে আমি রিয়ানের
সাথে মিশেছি তাই ও
আমায় প্রপোজ
করছে হিংসায় ।কিন্তু ও
এটা নিয়ে খুব বেশিই
বারাবারি করছে ।
হঠাত্ করে রিয়ানের
ফোন এলোঃ
রিঃ হ্যালো পেত্নি একি শুনছি লিমনের
প্রেমে নাকি তুই হাবুডুবু
খাচ্ছিস ।
|
মিরাঃ শোন ,লিমন
একটা পঁচা ছেলে ও
বন্ধুত্বের সম্মান
রাখতে জানে না তুই ও
ওর সাথে কথা বলবিনা ।
|
রিয়ানঃ ওকে পেত্নি ।
|
মিরাঃ মুখ
ভেঙ্চিয়ে যাহ দৈত্য ।
এভাবে চলতে থাকে মিরা আর
রিয়ানের বন্ধুত্ব ।বেশ
অনেকদিন ।
এরি মাঝে মিরার
চোখের কোনে কোন
ব্রান্ডের কাজল ,চুলের
কয়টা ব্যান্ট
আছে ,মিরা কোন
ড্রেসের সাথে কোন
জুতা - কানের দুল
পরে সব মুখুস্ত রিয়ানের
।
এইতো সেদিন ওর
হাতঘড়িটা নষ্ট
হলো রিয়ান
সারিয়ে আনলো তারপর
সেদিন ওর
বাসা থেকে বকাঝকা করছে সারারাত
রিয়ানের কাছে কল
দিয়ে কেঁদে কেঁদে কথা বললো ।
হঠাত্ করে রিয়ানের কল
এলো এই পেত্নি এখন
কিন্তু প্রচন্ড মশার
উপদ্রপ
মশারি টাঙ্গিয়ে ঘুমাস
আর রাতে যেন ক্রীম
ডলতে ভুলিস না ।
মিরাঃ দোয়া করি ,তোর
একটা ব নিগ্রোদের মত
বউ হই। তখন বুঝবি !
হঠাত্ করে একদিন
মিরা লিমনের
সাথে কথা বলে একটা নোটস
এর বিষয়ে ,রিয়ান
সেটা দেখে খুব কষ্ট
পায় ।
হঠাত্ রিয়ান
মিরাকে প্রোপজ
করে কারন
সে মিরাকে হারালে বাঁচবে না ।
খুব
ভালোবেসেফেলেছে মিরাকে ।
মিরাঃ দেখ রিয়ান
আমি তোকে বন্ধু
ভাবি আর তুই ও লিমনের
মত ...
আমি এটা এক্সপেক্ট
করি নাই ।আমার
সাথে আর তুই যোগাযোঘ
রাখিস না ।
এখন মিরা রোজ
একাএকা ভার্সিটি যাই
চুপচাপ বসে থাকে বাট
নিজের
ইগোটাকে ধরে রাখার
জন্য
একবারো রিয়ানকে ডাকে না ।
এই একাকিত্বের সুযোগ
নেই লিমন ।আবার সেই
হেল্প সেই রিক্সায়
ঘোরা ।কিন্তু এর
মাঝে কোথায়
যেনো একটা অপূর্নতা থেকে যাই
মিরার।
আসলে মিরা লিমনের
প্রতি এক ধরনের
মানুষিক
প্রতিশ্রুতিতে বদ্ধ ।
যেখানে ভালোলাগা নেই
তবে কিছুটা দ্বায়িক্ত
আছে ,সামান্যতম
ভালোবাসা আছে তবে আকাশ
সমান নিজের
আত্নঅহমিকা আছে ।
রিয়ানকে বিভিন্ন
কারনে ভূল
বোঝে এদানিং মিরা ,যেমন
ভেঙ্গে যাওয়া চুলের
ব্যান্ট টা তুলে রাখার
অভিযোগে ,মোবাইলের
ওয়ালপেপারে ওর ইমেজ
রাখার
অভিযোগে ইত্যাদি ইত্যাদি ।
মিরা বুঝতে পারে যে ও
রিয়ানকেই
ভালোবাসে কিন্তু ও এখন
লিমনের কাছ
থেকে ফিরে যাবার
কি উপায় আছে ?আর
রিয়ানের এই কষ্ট ও
মেনে নিতে পারছে না ।
এ কেমন দোটানা ?
মিরা আজ
কাঁদছে খুব ,নিজের
জেঁদের কাছে নিজের
ভালোলাগার
কাছে হেরে যেয়ে ।
নিজেকে দোষি দেখে ।
রিয়ান গোপন সূত্রে সব
জানতে পারে ।কিন্তু
রিয়ান কিভাবে মিরার
কাছে যাবে ,না মিরার
এই
দোটানা থেকে মুক্তি দেবার
জন্য নিজেই সরে যাবে ?
বুঝে উঠতে পারে না ।
আরে নাহ আপন
ভালো পাগলেও বোঝে ।
লিমন আর মিরা এখন
পার্কে
___এই পেত্নি তুই কি তোর
ঐ ঠোটের এই
লিপ্স্টিকটা নুতুন
নিয়েছিস ।
মিরাঃ মাসখানেক
আগে ,কেন ? এত প্রশ্ন
কেন তোর ?
রিঃ না মানে খুব
ইচ্ছে হচ্ছে ?
মিরাঃ চোখ
রাঙ্গিয়ে কি ?
রিঃ মানে ঐটা প্লিজ!
মিরাঃ তোর এই
অপরাধে ,টানা তিনদিন
হরতাল কথা না বলার ।
রিঃ না না ,যদি হরতাল
দিস আমি এখনি পার্ক
থেকে চলে যাব ।
মিরাঃ তুই যাস
না ,আমি রাজি ।
তবে লিপ্স্টিক
উঠে গেলে তখন ?
ব্যাগে তো আর লিপ্স্টিক
টেনে আনি নি ।
রিঃ কিছুক্ষন
পর ,আসলে লিপ্স্টিক
বাদেই
তোকে ভালো দেখাচ্ছে ।
এরপর থেকে লিপ্স্টিক
ব্যাবহার করা বাদ দে ।
কারন এর
পার্শপ্রতিক্রিয়নাই
আমার প্রবলেম
হতে পারে ।
মিরাঃ (লজ্জা পেয়ে)
তাতে আমার কি ? তোর
প্রবলেম ।এখন
থেকে সস্তাটা লাগাবো যাতে বেশি পার্শপ্রতিক্রিয়
ার
ভয়ে তোর বায়না কমে ।
রিঃ প্রবলেম নেই আমার
ঘাম মোছা রুমাল
আছে না ?
(.....আর
হে লিমনকে যে মিরা ভালোবাসেনা সেটা মিরাই
বলেছিলো মেসেজে ।
লিমন প্রথমে যদিও একটু
কেঁদেছিলো এখন ঠিক
হয়ে গেছে কারন
দুইজনের জীবনের
চেয়ে ,একজন এর
কিছুটা কষ্ট ,উত্তম নয়
কি ?.....)
ইচ্ছে করে ভুলে যাই.....................
-কেমন আছো শ্রভ্র?
-আমাকে বলছেন?-হুম। কেমন আছো?
-ও ও , তুমি!!! ভাল।
-জানতে চাইবা না আমি কেমন
আছি?
-কেমন আছো?
-
আসলে কি বলবো,আমাকে অনেকটাই
ভুলে গেছো।
-হুম। এখন আমি সব কিছু
ইচ্ছে করে ভুলে যাই।
আসলে ভুলে যাওয়াই ভাল।
আশাটা যখন নিরাশা হয়ে যায়,তখন
মানুষ একটু অন্য মনস্ক হয়ে যায় ,
ত্রিভুবনে কি হচ্ছে, তা খেয়াল
থাকে না। হয়তো বা আমার সেরকম
কিছু হয়েছে।
আমার বন্ধু মহিউদ্দিন
বলতো,"মানুষকে কখনো পুরোপরি আপন
করতে নেই, আমার মানুষের কাছ
থেকে কিছু
আশা করতে নেই,নতুবা অনেক কষ্ট
পাওয়া যায়।" তার কথা আমি তখন
বিশ্বাস করিনি,আজ তাই সত্যি হল।
-ওও তাই, শ্রভ্র। তোমার
কাছে আমি ক্ষমা চাবো না, কারন
আমি সেই যোগ্যতা হারিয়েছি।
-আজ পর্যন্ত যারা আমাকে কষ্ট
দিয়েছে অথবা আমার সাথে খারাপ
ব্যবহার করেছে, তাদের
আমি ক্ষমা করে দিয়েছি। তাই
তুমি ক্ষমা নিয়ে চিন্তা করো না।
ক্ষমার জন্যে এতদূর না আসলেও
পারতে।
-না, আমি ক্ষমার জন্যে আসিনি।
শুধু দেখতে এসেছি তুমি কেমন
সুখে আছো? বউ-বাচ্চা নিয়ে অনেক
সুখে আছো বুঝি? তোমার
বাবুটা দেখতে অনেক সুন্দর বুঝি?
-সুখ!!! অনেক সুখে আছি। আর বিয়ে!
এই জগতে সবাই চাইলে ও স্বার্থপর
হতে পারে না।
আচ্ছা নীলা তোমাকে একটা প্রশ্ন
করবো? আমাকে কেন ভালবাসলে।
আমিতো তোমাকে ভালবাসতে বলিনি।
তোমিই তো আমাকে প্রথম
ভালবাসতে বলেছিলে। তবে কেন
তুমি আমার সাথে এরকম করলে?
তুমি না বলেছিলে,ভালবাসা
কেন এটাকে কলঙ্কিত করলে?
আমাকে অনেক ভালবাসতে বুঝি?
আসলে আমি অনেক স্বার্থপর।
মেয়েরা অনেক স্বার্থপরই হয়।
অামি পারিনি সেদিন আমার
বাবাকে মৃত্যুর মুখে ফেলে তোমার
হাত ধরে পালিয়ে যেতে। আমি বড়ই
স্বার্থপর।
-কি হয়েছিল তোমার বাবার?
-বাবার ব্লাড ক্যান্সার ছিলো।
ডা্ক্তার বলেছিলো বড়জোড় তিন
মাস বাচবে। আমি বাবাকে খুব
ভালবাসতাম। মা আমার
কাছে এসে হাতাজোড় করে বললো,
তোর বাবার শেষ ইচ্ছে,
তোকে আকাশের
সাথে বিয়ে দিতে চায়।
আমি বললাম,সম্ভবনা,
তোর বাবা প্রচন্ড অসুস্থ,ডাক্তার
বলছে, তাকে কোন রকম মানুষিক কষ্ট
না দিতে। না হয়,সব
আশা নিরাশা হয়ে যাবে। তুই
রাজি হয়ে যা মা, তোর বাবার
দিকে চেয়ে। আমি সেদিন আমার
সুখের কাছে আমার
বাবাকে বিসর্জন দিতে পারিনি।
তাই আমি আকাশকে বিয়ে করেছি।
-আসলে তোমার দোষ নাই। সবই
নিয়তি। ভাগ্যের নিমর্ম পরিহাস
আমাদের সাথে ঠাট্টামি করেছে।
কি আর বলবো,
শুনেছি বিধাতা নাকি, মানুষের
অমঙ্গল চান না। হয়তো বা এতেই
কল্যাণ নিহিত।
-হয়তো বা।
-হুম,নীলা। কেমন কাটছে বিবাহিত
জীবন? অনেক সুখ না।
-বিবাহিত জীবন! খুব সুখে আছি।
আদর্শগত দিক দিয়ে ছেলে অনেক
সৎ-নিষ্ঠাবান একজন পুলিশ
অফিসার ছিল।
আশা করে ছিলাম,তোমার
না পাবার ধবল
হয়তোবা কাটিয়ে ওঠতে পারবো।
কিন্তু
পারিনি,বিধাতা আমাকে সে সুখ
দেয়নি। আসলে এই
অভাগী যেদিকে যায়,সেদিকেই
সাগর শুকায়।
-কেন, কি হয়েছে?
সেদিন ছিল,রবিবার,বিরো
৪৮ ঘন্টা হরতাল। আমাদের বিয়ের
রাত। রাত ১০টা। আকাশ যখন বাসর
ঘরে ঢুকলো,তখন হঠাৎ ফোন আসলো।
ফোন শেষে , আকাশ বলল,"
আমাকে এখনই
যেতে হবে,একটা লোক খুব
বিপদে পড়েছে। আমি ১ ঘন্টার
মধ্যে আসতেছি।" আর কোন খবর
পাইনি,দীর্ঘ দুইমাস পর
সে এসেছিলো ঠিকই, কিনতু জিবিত
না ,মৃত। আসলে বিধাতার বিচার
চিরন্তন,ঠিক। কাউকে কষ্ট
দিয়ে কখনো সুখি হওয়া যায় না।
-সরি,তোমাকে আমি অনেক ভুল
বুঝেছি। আমাকে ক্ষমা করো।
-তুমি ক্ষমা চাচ্ছো কেন? তোমার
কোন দোষ নেই।
-আর বিয়ে হয়নি তোমার,নীলা?
-আকাশ মারা যাবার পর,শ্বুশর
বাড়ি থেকে চলে আসি। তার ১ মাস
পরই বাবা মারা যায়। বাবার
শোকে মা অজ্ঞান হয়ে যায়,
তারপর আর জ্ঞান ফিরে আসেনি।
তারপর পাশের
প্রাইমারি বিদ্যালয়ে একটা চাকরি নেই।
যা মাইনে পেতাম,
তা দিয়ে মিলাকে নিয়ে চলে যায়।
-আমাকে এসব বলনি কেন?
-কি করবো। আমি যে তোমার
কাছে বড়ই অপরাধী। ২টার বছর ধরে,
তোমার কথা প্রতিরাতে মনে হয়,
কাঁদতে কাঁদতে কত রাত পার
করে দিয়েছি। তবুও তোমার
সামনে এসে দাড়াবার সাহস
পাইনি। আর থাকতে পারলাম না।
অাজ মন শক্ত করে চলে এলাম,
তোমাকে একটু দেখবো বলে।
-তোমার মুখটা এত শুকনা কেন?
সকাল থেকে মনে হয় কিছু খাওনি।
চল কিছু খাওয়া যাক।
-আমার ক্ষুধা লাগেনি।
-আরে চলতো।
............
-আচ্ছা শ্রভ্র,আমার
একটা কথা বলতে মন চাচ্ছে। যদিও
সেই অধিকার আমার নেই।
-বল। সমস্যা নাই।
-
আমি কি নতুনভাবে তোমাকে ভালবাসিত
পারি।
-তা হয় না,নীলা। তা হয়না। যে ক্ষত
মোর হৃদয়ে পড়েছে,তা শোকায়নি।
আবার নতুন করে ক্ষত করতে চাও।
-না শ্রভ্র। আমি আর ক্ষত করবো না।
যেই ক্ষত করেছি, তার
অ্যান্টিবায়েটিক
করবো।
-না নীলা, আমি আর এখন
মেয়েদেরকে বিশ্বাস করি না।
আমাকে ক্ষমা করো।
কাদছো কেন,অশ্রুটা তোমার প্রধান
হাতিয়ার,তাইনা। কেদে লাভ নাই।
আসলে তোমার কাছ থেকে কষ্ট
পাবার পর থেকে,অনেক
কেদেছি,নিজেকে অনেক
বুঝিয়েছি,নিজেকে
আস্তে আস্তে শক্ত করেছি।
-না কাঁদছি না, চোখে কি যেন
পড়েছে। সরি ,তোমাকে এসব বলার
জন্যে। এখন আসি।
-আচ্ছা, ভাল থেকো।
পারলে ভুলে যেয়ো।
-পারবো না।
(বলে নীলা হাটছে,অজানা এক পথে।
যদিও এ পথে সে কতবার এসেছে।
কিন্তু আজ সেই পথটা বড়
অজানা লাগছে। নীলার
বিষাদমাখা মুখের
পাশাপাশি আকাশটা বড়ই
হাসোজ্জল মুখে একমুঠো রোদ
নিয়ে হাসছে। সবই যেন নীলার
প্রতিকূলে,
নীলাকে সান্তনা দেবার মত কেউ
নেই। আজ আবার শনিবার।
নীলা শোনেছে মানুষের শনিবার
নাকি আবার খারাপ যায়।
আত্মহত্যা করবে, তাও
পারছে না কারন বাড়িতে তার
ছোট বোন মিলা আছে।
নীলা মারা গেলে ওকে দেখবে কে!)
-ছয় দিন পর। আজ শুক্রবার।
(বরাবরের মত, নীলা ফজর নামাজ
পরেছে। সে প্রতিদিনিই আল্লাহর
কাছে,শ্রভ্রর জন্যে মঙ্গল
কামনা করে। আজ সে আল্লাহর
কাছে বলেছে,আল্লাহ
তুমি আমাকে কষ্ট দাও।
কিন্তি শ্রভ্রকে কখনো কষ্ট দিওনা।
আর দুচোখের
কিনারা বয়ে গেছে শুধু অথই জল।)
-নামাজ পড়ে ওঠতেই, কলিং বেলের
চির চেনা সুর।
দরজা খুলতেই,যা দেখলাম
তা কখনো বাস্তবে দূরের
কথা কল্পনায় ও ভাবিনি।
দেখলাম, শ্রভ্রর
হাতে একতোরা গোলাপ আর
রজনীগন্ধ্যা।
সে হাটুঘেরে বসে গিয়ে,আমাকে বলল,"
I Love u too নীলা "
তারপর শ্রভ্রকে জড়িয়ে ধরে, ওর
বুকে মাথা রেখে,অনেকক্ষণ
দাড়িয়ে থাকলাম। অদ্ভুত সেই
অনুভূতি, যার স্বাদ আমি আজ প্রথম
পেয়েছি।
-তারপর একটু পর,শ্রভ্র বললো,"
মেডাম, অনেক হয়েছে। এই নিন,এর
ভিতর একটা শাড়ি আছে। যান
পড়ে আসেন। বাহিরে যাব।"
-আমার না এভাবেই তোমার
বুকে মাথা রেখে থাকতে মন
চাচ্ছে। কোথায় যাবা?
-কাজী-অফিসে যাব। আজ
থেকে ২বছর
আগে,বিয়ে না করে প্রেম করেছি,
তাই তোমাকে হারাতে হয়েছে।
এখন বিয়ে করে প্রেম
করবো ,তবে তোমাকে আর
হারাতে হবেনা। বুঝলা?
-হুম। Good Idea, আসছি, তুমি বস।
..............
পার্কে হাটছি পাশাপাশি দুজন ...
-শুভ্র, আজ না আমার অনেক খুশির
দিন। প্রকৃতিটা ও আজ দারুণ লাগছে।
-হুম। কোমর-অবধি তোমার কর্ণ
পতিত চুলের সাজ দেখে,প্রকৃতি আজ
হয়তোবা কিছুটা হিংসুটে হয়ে ওঠেছে।
এমন
একটা রমনী পাশে থাকলে,প্রকৃতির
দিকে তাকানোর সময় কই।
-হুম, তাই বুঝি। আমার
সাথে ফাইজলামি করতেছো,না!
ফাইজলামি না, সত্যি বললাম।
-হাতটা ধর,আর কখনো হাত
ছারবা না,বুঝলা।
-হুম।......
(এভাবেই চলতে লাগলো শ্রভ্র ও
নীলার সুখে ঘেরা স্বর্গ নামক
ভালবাসার নীড়।
ভালবাসাতো এমন একটা জিনিস
যার কোন সংজ্ঞা নেই, শুধু অনুূভব
করা যায়। বর্তমানে ভালবাসার
অবস্থান খুবই করুণ। ভালবাসা নামক
পবিত্র বস্তুকে , লোভ ও
কামনা নামক ছাইপাশ
দিয়ে করা হচ্ছে পদদলিত,
তা নিয়ে আমি বড়ই টেনসিত।
আমাদের নিজেদের
মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে হবে।
সবাই ভাল থাকবেন।)
অভিমান
শিকড়ে অদ্ভূত
অঙ্গভঙ্গিতে বসে আছে তৈয়ব, এখন
সে নিয়মিতো নামাজ
পড়তে চেষ্টা করে| সে আজ
খালি হাতে বসে আছে, তার
হাতে আজ মোবাইল নেই সিগারেট
ও নেই বুকের ভেতরের
শুন্যতা হাতকে ছুঁয়ে গেলো তাই
হাতটা ও খালি|
হটাত করে পাশ দিয়ে রাজু কোথায়
যেনো যাচ্ছে তৈয়বকে দেখে বলছে কিরে আজ
তো ক্রিকেটে সেন্সুরী মারচোস
পাটি দিবি নাকি? তৈয়ব নিশ্চুপ!
তারপর রাজু নিজেই বললো,
অনেকদিন
হচ্ছে টাকা দিয়া পাটিতে আসিসনা কেনো কাল
পাটি আছে আসিস কিন্তু, তৈয়ব ২০০
টাকা বের করে দিয়ে বললো এই
নে পাটির টাকা রাজু
টাকাটা নিয়া চলে গেলো| এখন
তৈয়বের কাছে টাকা থাকে তৈয়ব
খুব ফালতু হয়ে গেছে বিরধীদলের
যে কোন কর্মসুচিতে অংশ নেয়
এবং একটা চোটখাটো পদ ও
পেয়েছে রাজনৈতিক সংঘঠনের|
এতে মানুষ তাকে খারাপ জানলেও
তাতে কি? নিজের চলাফেরা আর
হাত
খরচাটাতো চলে ওদেরকে পাটির
টাকাটা না দিলে সমস্যা হতো তাই
দিয়া দিলো, পাটিটা এক কথায়
নেশার আসর|
বাসায় যেতে ইচ্ছে হয়না তার,
কেননা বাসায় গেলেই অসুস্থ
বোনের পাগলামো দেখতে হবে,
তার সাথে বেকারত্বের
অভিশাপে মায়ের
বকুনিতো বাধ্যতামূলক! আম্মু
দিনে ২ বেলা খাইয়ে ৪
বেলা বকা দেয়, বকা না দেওয়ার
কোন কারন নেই কেননা, অতি নিন্ম
মধ্যবিত্ত পরিবারের অসুস্থ
বাবা মায়ের একমাত্র ছেলে আর ৪
বোনের একমাত্র
ডিপ্লোমা ইন্জিয়ার ভাইয়ের
বেকার থাকাটা পরিবারের
জন্যে অভিশাপ স্বরুপ|
তাই শীকড় টাতে বসে আছে তৈয়ব
আর ভাবছে এখানে বসে মনের
সাথে কতনা কথা হতো কতনা পাগলামো কতনা অভিমান
আর কতনা ভালোবাসায়
ঘেরা ছিলো সে দিনগুলো| কিন্তু
আজ আর সে নেই তাই মোবাইল
টা হাতে না থাকলেও সমস্যা নেই
কেননা, কেউকে ফোন করবার
তাড়া নেই এখন কেউ রিংটোন
শুনবে এই ভয়ে মোবাইলটা সাইলেন্ট
করে রাখা লাগেনা তাই
মোবালটা ঘরে রেখে এসেছে সাইলেন্ট
না করেই, দরকারি ফোন আসলে ও
আসতে পারে হয়তোবা কোন
কম্পানী থেকে চাকুরীর ইন্টারভিউ
এর খবর জানাবে, তা জানা টাও খুব
দরকার মনে হয়না চাকুরীটা হলেও
কি? এর বেতন দিয়া তৈয়ব তো আর
অতি নিন্ম মধ্যবিত্ত
থেকে মধ্যবিত্ত অথবা উচ্চবিত্ত
হয়ে মনের যোগ্য হতে পারবেনা,
মনকে পাবার শিক্ষাগত বিত্তগত
কিংবা আচরনগত কোন যোগ্যতাই
যে তার নেই| এসব ভাবতে ভাবতেই
তৈয়বের চোখের কোনে কান্নাহীন
জলের ফোঁটা জমে গেছে,
এখন সিগারেট
টানলে হয়তো সিগারেটের রংগিন
ধোঁয়ায় নিজের
কষ্টটাকে কিছুটা হলেও
উড়িয়ে দেওয়া যেতো! কিন্তু এই মদ
গান্জার নেশা যে তৈয়ব
কে মাতাল করে এবং তার সংকীর্ন
মানুষিকতার সাথে যুক্ত
করেছে নোংড়া আচরন, তার পর
থেকেইতো তৈয়ব আজ সবার
কাছে বিরক্তির আর ঘৃনার পাত্র|
যদিও তৈয়বের এসব
নোংড়ামতো সবছেয়ে অপমানিত
হয়েছে সে নিজেই, তারপর
সবছেয়ে নিকৃষ্ট ভাষার তার মন আর
শ্রষ্টাকে আঘাত করে প্রমান
করেছে একটা মানুষ
কতোটা নিছে নামতে পারে|
তাছাড়া আরো কিছু কারনে কোন
এক দিন তৈয়ব সিদ্ধান্ত
নিয়েছে নেশাতো দূরের কথা আর
সিগারেট ও টানবেনা এবং তার
মনের নিষেধ করা কাজ
না করতে সর্বোচ্চো চেষ্ঠা করবে!
তাই আজ হাতে সিগারেট নেই
আছে শুধু বুকের সাথে হাতের গভীর
যোগসূত্র আর তা হলো শুন্যতা|
তবুও তৈয়ব সব দেখে আজ সব কিছু
বুজতে শিখেছে, ব্যাক্তিত্বহীন
তৈয়ব আজ কিছুটা হলেও ব্যাক্তিত্ব
পেয়েছে, যদিও তৈয়ব আজো তার
মনের কাছে ব্যাক্তিত্বহীন
নির্লজ্জ হয়ে বারে বারে পরাজয়
মেনে নিয়ে অপরাধ স্বীকার
করে আত্মসমর্পন করে বলে,
আমাকে ক্ষমা করো তোমাকে ছাড়া থাকতে আমার
খুব কষ্ট হচ্ছে মন
আমাকে তুমি ফিরিয়ে নাও মন
আমি যে আর পারিনা মন|
শীকড় টাতে এখনও বসে আছে তৈয়ব
আর খুব ইচ্ছে করছে মনকে বাসায়
গিয়ে একটা ফোন দিয়ে বলতে মন
আমি গতবছর পারিনি কিন্তু এবার
পেরেছি ক্রিকেটে সেন্সুরী করতে,
কিন্তু মন যে তার ফোন
দরবেনা কারন তৈয়ব
যে ব্যাক্তিত্বহীন নোংড়া আর
অযোগ্য|মেসেজ
করে জানাতে পারতো কিন্তু
যে তৈয়ব প্রত্যেকটা ক্রিকেট ম্যাচ
শেষে ম্যাচের বিবরনী তার
মনকে জানাতো সে আজ
সেন্সুরী করার পর জানানোর সুযোগ
থাকা সত্ত্বেও জানায়নি,
একটা ভয়ে হয়তো মন এখানেও
রিলেশন ব্রেক আপ করার পজেটিভ
দিক খুঁজে নিয়ে ভাববে সম্পর্ক শেষ
হওয়াতে ভালোই হয়েছে, সম্পর্ক
থাকা কালে তৈয়ব
যা পারেনি আজ সেটাই পারছে|
তারপর এশার আযান দিচ্ছে আযান
শেষে গাছ থেকে একটা শুষ্ক
পাতা ঝরে পড়লো, তৈয়ব
ভাবতে লাগলো গাছের
কাছে পাতাটা যোগ্যতা হারিয়েছে তাইতো গাছটি পাতাটিকে ফেলে দিলো,
তারপর
একটা কথা মনে পড়লো নির্বাচনী প্রচারনায়
আমাদের দলীয় পোলাপান কিছুদিন
আগে মিছিল করলো, যোগ্য
প্রার্থী দিলদার ভাই চেয়ারম্যান
পদে তাকে চাই, তখনই তৈয়বের
দৃষ্টি বাস্তবতায় পড়লো আর
নিজেকে বোঝাতে লাগলো,
আমি কিভাবে মনকে পাবার
আশা করি আমিতো মনকে পাবার
প্রার্থী হবারো যোগ্য নই! অতঃপর
তৈয়ব ভাবতে থাকে হয়তো এসব
জন্ত্রনার অবসান হবে নিজের
সন্মান আর
ব্যক্তিত্বকে ফিরে পাবে সে কেননা একটা চাকুরী হতে পারে অতি শীঘ্রই,
চাকুরী জীবন নানাবিধ ব্যাস্ততার
কারনে তৈয়বের জীবন
নিয়ন্ত্রনে চলে আসবে, পরিবারের
কাছে ফিরে পাবে তার
যথাযোগ্যস্থান আর
ভলো রাখতে পারবে পরিবার আর
তার আশেপাশের মানুষগুলোকে,
সবার আনন্দ দেখে চরম
প্রশান্তিতে তৈয়বের
চোখে ফুটে উঠবে প্রকৃত হাসি|
কিন্তু সময়ের
প্রয়োজনে যে চলে গেছে সে কি আসবে ভালোবাসবে?
তৈয়ব আরো ভাবে বাস্তবতায়
তো দেখি কেউ যায় কেউ
আসে এইতো সেদিন রিকু
আরেকটা গার্লফ্রেন্ড
পাল্টালো আর মনকে প্রপোস
করা সাইফের ফেসবুক আইডির ওয়াল
আর পটো গুরে দেখলো সে এখন
আরেকজনের সাথে সম্পর্ক
করছে তখন মনে হয় এটাই বোধহয়
বাস্তবতা এটাই বোধহয় আধুনীকতা!
তৈয়ব এসব ভেবে একটু
মুচকি হাসে যদিও হাসিটার
মানে তৈয়ব ছাড়া আর কেউ
বুঝেনা বুঝবেওনা|এখন আর
সে নেশার রঙ্গিন ধোঁয়ায় কষ্ট
না উড়িয়ে শান্তির পরশে কষ্ট দূর
করতে চায়, তৈয়ব এখন একটাই স্বপ্ন
দেখে আর তা হলো যেভাবে সম্ভব
আশপাশের মানুষ
গুলোকে সুখী করা আর তার মন
ফিরুক আর নাইবা ফিরুক
তাকে আকড়ে ধরেই বেঁচে থাকা,
যদিও
এটা বাস্তবতা বিরুধী তবে একটা কথা মানতে হবে মানুষ
যা করে সেটাই বাস্তবতা আর
তৈয়ব নিজের স্বপ্নকে বাস্তবতায়
পরিনত করবেই তার কারন একটাই
সে তৈয়ব, এবং সে তৈয়ব বলেই
এটা সম্ভব| তারপর তৈয়ব শীকড়ের
মায়া ছেড়ে এশার নামাজ
পড়তে মসজিদে রওনা দিলো
-এই তুমি খালি গায়ে কোথায় যাও!
-ছাদে।
-ছাদে যাবে, তো খালি গায়ে কেন!
-আজ জ্যোৎস্না রাত,দেখছনা?
-দেখবোনা কেন, কিন্তু তাতে কি?
-আমি জ্যোৎস্না স্নান করবো। কাপড়
পরে কি স্নান হয়?
-ফাইজলামি করবেনা আমার সাথে।
চাঁদনী রাতে অনেকেই ছাদে হাটে, ঘর
থেকে বেরোয় কিন্তু
খালি গায়ে জ্যোৎস্না উপভোগ
করে কয়জন?
-কেউ না করলেও আমি করি। আর অন্য
কেউ যে এমন করেনা তার
তো নিশ্চয়তা নেই। লক্ষ কোটি মানুষের
কে কি করে তুমি নিশ্চই জাননা।
-তোমার এইসব উদ্ভট যুক্তি আর
কাণ্ডকারখানা আমার অসহ্য লাগে।
-আমার দেরী হয়ে যাচ্ছে আমি গেলাম।
তুমিও আসতে পার।
-এই যাবেনা বলছি,শুনো।
কিন্তু অন্তু
ততক্ষনে চলে গেছে দরোজাটা খুলেই।
সিঁড়িতে পায়ের আওয়াজ
শুনতে পাচ্ছে সামিয়া। অন্তু আর
সামিয়ার বিয়ে হয়েছে প্রায় বছর
খানেক। এরেঞ্জ ম্যারেজ তাদের।
পেশায় একজন স্কুল শিক্ষক অন্তু।
বাবা মার ইচ্ছাতেই বিয়ে করেছে ওরা।
রীতিমত
ঘটক,কনে দেখা,পানচিনি অনুষ্ঠান সব
হয়েছে। কিন্তু বিয়ের পর থেকেই
সামিয়া লক্ষ করছে অন্তু কেমন যেন
উদাস থাকে। মাঝ রাত্রিতে ঘুম
ভাঙ্গলে অনেক সময় দেখা যায়
বেলকনিতে বসে আছে অন্তু। একের পর এক
সিগ্রেট ফুঁকছে। কখনো দেখা যায়
সামিয়াকে ঘুম
থেকে ডেকে তুলে বলে "এই
সামিয়া আমার ঘুম আসছেনা,গল্প
করি উঠ।"
বাচ্ছা নেয়ার ব্যাপারেও ঘোর
অনীহা অন্তুর। বললেই বলবে"এত অস্থির
হবার কি সামিয়া,সবেতো বিয়ে হলো।
যাকনা কিছুদিন।"
সামিয়া কিছুতেই বের
করতে পারছেনা অন্তুর উদাসীনতার
পিছে লুকিয়ে থাকা রহস্যগুলো।
সামিয়াকে প্রকৃতি তেমন আকৃষ্ট
করতে পারেনা। বৃষ্টি,চাঁদনী রাত
কিংবা গোধুলীর আলো এসব তার
কাছে আহামরি কিছু না কিন্তু অন্তুর
কাছে এসবই মনে হয় জীবন।
ভাবতে ভাবতে সামিয়া উঠে দাঁড়ালো।
দেখে আসতে চায় রহস্যময় স্বামীর
খালি গায়ের জ্যোতস্না স্নান।
ওইতো অন্তু ছাদের দক্ষিন ধারে হাটছে।
এই রকম চাঁদের আলোতে একটা মানুষ
খালি গায়ে হেটে বেরাচ্ছে।
দৃশ্যটা বিধঘুটে। অন্তত সামিয়ার কাছে।
সামিয়া ধীরে ধীরে পা ফেলে অন্তুর
পাশে গেল।
(২)
-অহ তুমি এসেছ,তোমাকে আজ কিছু
জিনিস
দেখাবো যা আগে কখনো বলিনি।
-সব কিছু দেখবো তবে তার আগে তোমার
কাপড় পরতে হবে। এই
স্যান্ডো গ্যাঞ্জিটা গায়ে দাও।
অন্তু অসহায় ভাবে সামিয়ার হাতের
গ্যাঞ্জিটার দিকে তাকিয়ে রইলো।
ছোট বাচ্ছা যেমন তেতো ঔষুধ খাওয়ার
আগে অসহায়ত্ব মুখে ফুটিয়ে তুলে ঠিক
তেমনি।
-না পরলেই কি নয়?
-না।
-ওকে,দাও।
একরকম বাধ্য হয়ে গেঞ্জিটা পরলো অন্তু।
-এবার বলো কি বলবে? সামিয়ার প্রশ্ন।
-ইচ্ছে করছেনা আর সামিয়া।
-না করলে নেই।
-সামিয়া একটা কথা বলবে?
-কি?
-আমাকে কি তোমার পাগল মনে হয়?
-হয়।
-
তুমি আমাকে বিয়ে করে সুখী নও,তাইনা?
-আমি জানিনা অন্তু।
-আমি জানি,আমি সুখী হতে পারিনি।
-কি!
-হে। তোমাকে আমার কিছু বলার আছে।
-কি?
-আমাদের কিছু দিন
আলাদা থাকা উচিৎ।
-তারপর?
-আলাদা থেকে আমাদের একজন
আরেকজন সম্পরকে জানা উচিৎ।
-পিকুইলিয়ার টাইপ
কথা বলছো তুমি অন্তু!
একসাথে থেকে যা হয়নি সেটা আলাদা থেকে কিভাবে সম্ভব?
-সম্ভব।
(২)
-কি করছ সামিয়া?
-বসে বসে বোর হচ্ছি।
-কেন?
-আমার খুব একা লাগছে অন্তু।
-কেন?
-জানিনা।
-আমার মাথায় একটা প্লান
আসছে,শুনবে?
-আগামী কাল তোমার সাথে রমনায়
দেখা করবো!
-কি বলছো এসব?
-যা বলছি তাই।
-কাল বিকাল ৫ টায় তুমি রমনায়
দেখা করবে আমার সাথে। আর এখন খুব ঘুম
পাচ্ছে,কাল সকালে অফিসে গিয়ে সব
খোলে বলবো। এখন রাখি,তুমিও
ঘুমিয়ে পড়।
-আমার ঘুম আসছেনা।
-তাহলে এক কাজ করো,কাল
কি পরবে,কি করবে প্লান করতে থাকো।
আমি ঘুমাই।
-তুমি একটা পাগল, আচ্ছা ঘুমাও।
-ঘুমাচ্ছি,অহ শুনো। কাল বাজারের লিস্ট
দেয়ার দরকার নেই। বাই।
-ওকে,বাই।
কি অদ্ভুত এক সংসার চলছে এখানে। আজ
দশম দিন সামিয়া আর অন্তু কেউ
কারো মুখ দেখেনি। অথচ একই বাসায় একই
ছাদের নীচে বসবাস করছে। এটা অন্তুরই
প্লান। ওদের কেন জানি খিটিমিটি আর
মতবিরোধ লেগেই ছিল। অন্তুর প্লান
হচ্ছে, কিছুদিন আলাদা ঘুমাবে তারা,
কেউ কারো চেহারা দেখবেনা,
সামিয়া একা একাই রান্না করে খাবে,
অন্তু শুধু রাতের খাবারটা বাসায়
খাবে তবে নিজে রান্না করে, বাজারের
প্রয়োজন হলে সামিয়া লিস্ট
দেবে অন্তুকে, কেউ কারো সামনে ভুলেও
আসবেনা। এই অনুপস্থিতি বা অদেখাটাই
নাকি তাদের দূরত্বটা কমাবে। এক জনের
জন্য আরেক জনের
ভালবাসা বা ফিলিংসগুলো বিল্ড আপ
করবে। আর যদি কাজ না হয়
তবে তারা সেপারেশন করবে।
****
-৫ টা বেজে ২০ মিনিট অন্তু। ইউ আর লেট
টু মাচ।
-আর ৫ টা মিনিট প্লীজ,এইতো পৌঁছলাম
বলে।
-
অসহ্য,তুমি আরো আগে রওয়ানা দিলেনা কেন?
একটা মেয়ে এভাবে একা একা বসে থাকতে পারে?
আমার ভয় করছে।
-বললাম তো সরি,অফিস থেকে বের
হতে পারছিলাম না।
এইতো এসে গেছি,ভয়ের কিছু নেই।
আসলে দুজনেরই তর সইছেনা দেখা করার
জন্য। প্রেমিক প্রেমিকার প্রথম
দেখা করার মতোই যেন রোমাঞ্চকর কিছু
এটা। সামিয়া প্রথম থেকেই অন্তুর এইসব
পাগলামীর
বিরোধীতা করে আসছে কিন্তু নিজের
অজান্তেই সেও ফেঁসে গেছে এই খেলায়।
অন্তুর ঠিক যেরকম পছন্দ
তেমনি সেজে এসেছে সামিয়া।
শাড়ী অন্তুর পছন্দ না। কালোর
মাঝে সাদা প্রিন্টের সালোয়ার
কামিজ পরে এসেছে সামিয়া। মাথায়
ওড়না আর কপালের
একপাশে চুলগুলো ফেলে রাখা।
হাতে লাল আর সাদা গোলাপের
একটা ছোট তোড়া। হাতের এন্ড্রয়েড
ফোনের মিররে বার বার
দেখছে নিজেকে কেমন লাগছে?
খুশী হবেতো তাকে দেখে অন্তু? চাকরীর
ইন্টার্ভিউ দিতে গিয়েও হয়তো এত
চিন্তায় থাকেনা কেউ!
মনে প্রাণে প্রার্থনা করছে অন্তু যেন
খুশী হয় তাকে দেখে। বউ তো নয় যেন
প্রেয়সীর টেনশন। প্রেমিককে প্রথম
দেখায় রূপলাবণ্য দিয়ে কপোকাত করার
খেয়াল মনে হচ্ছে। এমন সময় ওর
ফোনটা বেজে উঠলো আবার। অন্তুর
ফোন।
-সামিয়া।
অন্তুর কণ্ঠে কেমন একটা অসহায় সুর
বাজছে।
-হুম বলো,কই তুমি?
-একটা সমস্যা হয়ে গেছে সামিয়া!
এমন কিছুই আন্দাজ করেছিল সামিয়া।
-কি?
-আমি আসতে পারবোনা। তুমি বাসায়
চলে যাও।
-হোয়াট?
সামিয়া কি বলবে ভেবে পাচ্ছেনা।
রাগে দুঃখে সামিয়ার চোখে জল
এসে গেল। এত অপেক্ষা,এত সাধনা করার
পর এটা কি শুনলো সে?
পেটে বাচ্ছা ভেবে আলট্রাসনোগ্রাম
করে টিউমার দেখলেও হয়তো এতটা হতাশ
হতোনা সামিয়া।
-প্লীজ সামিয়া রাগ করোনা,অফিস
থেকে জরুরী ফোন আসলো এই মাত্র। মাঝ
রাস্তা থেকে ফিরে যাচ্ছি তাই।
সমস্যা নেই আমরা আজ বাসায়
দেখা করবো।
-অসম্ভব,কক্ষনো না। আমাদের আর
দেখাই হবেনা। আমি এখান
থেকে সোজা বাসায় যাচ্ছি,বাবার
বাসায়।
রাগে ফেটে পড়লো সামিয়া।
-
সামিয়া পাগলামী করনা প্লীজ,বোঝার
চেষ্টা কর।
-সাট আপ, আর একটাও
কথা বলবেনা তুমি। ফোন রাখলাম আমি।
লাইন কেটে দিয়ে মাথা নীচু
করে পার্কের
বেঞ্চে বসে থাকলো সামিয়া।
ফোটা ফোটা অবাধ্য চোখের জল
মওকা পেয়েই গড়িয়ে পরতে থাকলো।
ফুলের তোড়াটার দিকে চোখ যেতেই
সামিয়ার মনে হলো, লাল
সাদা গোলাপগুলো তাকে যেন উপহাস
করছে। হাতে নিয়েই ছুড়ে ফেলে দিল
ওগুলো। দশটা দিনের আলাদা থাকার
ফলস্বরূপ অন্তুর যে শূণ্যতা তার
হৃদয়ে সৃষ্টি হয়েছিলো সেসবও যেন
ফুলগুলির সাথে দূরে ঠেলে দিল। তারপর
উঠে দাঁড়ালো ফিরে যাবার জন্য।
অভিমানের
স্রোতে ভেসে ভেসে সিদ্ধান্ত নিয়েই
ফেলেছে বাবার বাসায় চলে যাবে।
ঘুরে যেই পা ফেলবে দেখে অন্তু
দাঁড়িয়ে আছে ওর ছুড়ে ফেলা ফুলের
তোড়াটা হাতে নিয়ে।
মুখে মায়া ভরা নিষ্পাপ একটা হাসি।
মানুষটা আহামরী সুন্দর বা স্মার্ট
না কিন্তু তার এই হাসিটা ভূবন
ভুলানো সন্দেহ নেই। ফুল
হাতা একটা আকাশী শার্ট
পরে এসেছে অন্তু, ছোট ছোট চুলে একদম
বাচ্ছা ছেলেদের মতো লাগছে।
সামিয়া কি বলবে বুঝতে পারছেনা।
আনন্দ,রাগ আর অভিমানের মিশেল
তাকে যেন হতবাক করে দিয়েছে।
অশ্রুদের দ্বিগুন উদ্যমে ঢল নেমেছে।
-তুমি একটা শয়তান অন্তু।
এই
বলে দৌড়ে গিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়লো সামিয়া অন্তুর
বুকে।
-আরে আরে করে কি পাগলী! মানুষ
দেখছেতো। মুখ লুকালে হবে নাকি,
আমি আমার সুন্দরী বউটাকে দেখি।
তোমাকে না অসম্ভব সুন্দর
লাগছে সামিয়া।
কথাগুলো সামিয়ার
কানে গেছে কিনা বোঝা গেলোনা,
কারন সে আর অন্তুর বুক
থেকে মাথা তুলছেনা। শরীরের
কাঁপুনি দেখে অনুমান করা যায়
সে কাঁদচে।
ফেসবুক প্রেম................
সমাজের এক সুনামধন্য পরিবারে বড়
হয়ে ওঠা ছেলে তুহিন। ও
ছিলো কলকাতার
অভিনেতা দেবের পাক্কা ভক্ত। বন্ধুদের
প্রায় ই
বলত দেব
নাকি তাকে শিখিয়েছে ভালবাসা কি?
এই
সুবাদে দেব ফেন দের কাছে অনেকটাই
জনপ্রিয়
হয়ে উঠলো তুহিন। একদিন একটা ফ্রেন্ড
রিকুয়েস্ট
আসল। নাম "মোহনা ইসলাম". দেখেই
চমকে উঠলো তুহিন। এ
তো দেখি বাংলাদেশি মেয়ে রে বাবা!!
প্রোফাইল
চেক করে দেখল মেয়েটাও দেব এর ভীষন
বড়ও ফেন।
মেয়েটা তার থেকে ২ বছরের ছোটো।
মেয়েটাই আগ
বাড়িয়ে মেসেজ দিল।
মোহনা : কেমন আছেন?
তুহিন : এই চলছে। তুমি?
মোহনা : ভালো আছি। কোথায়
থাকা হয়?
তুহিন : সিলেট। তুমি?
মোহনা : আমি যশোর। দেবের কোন
মুভি টা সবচেয়ে বেশি ভাল লাগে?
তুহিন : প্রেমের কাহিনী।
মোহনা : খুব রোমান্টিক মনে হচ্ছে।
তুহিন : কিছুটা তো বটেই।
এভাবেই তারা হয়ে ওঠে ভাল বন্ধু।
সম্পর্ক
হতে থাকে ঘনিষ্ট থেকে ঘনিষ্ঠতর
তুহিন কেন জানি মোহনার প্রতি টান
অনুভব
করতে লাগলো।
তুহিন : আচ্ছা মোহনা একটা কথা বলব?
মোহনা : অবশ্যই।
তুহিন : তুমি আমার কোয়েল হবে?
মোহনা : এতদিন লাগলো এই কথা বলতে?
তুহিন : অহম
মোহনা : গাধা একটা
এরপর প্রত্যেক দিন কথা হত তাদের।
একদিন তুহিন
ফোন নম্বর চাইলে মোহনা নিজ থেকেই
কল করল।
এভাবে চলতে থাকল তাদের মিষ্টি প্রেম
মোহনাকে ছাড়া একদম
থাকতে পারতো না তুহিন।
পরিবারের চাপের মধ্যেও তাকে কল দিত
মোহনা।
কখনো নিজেরটা দিয়া,কখনো বাবা -
মায়েরটা দিয়া। অবশ্য বাবা - মায়ের
ফোনে কল
দিতে তুহিনের অপর
নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল
মোহনা।
৩ মাস পর।
মোহনা যেন কেমন পাল্টে গেছে। আগের
মতো কথা বলেনা। আগের সেই
মায়াবী হাসি আর
দুষ্টুমি নাই। তুহিনের প্রতি কড়া শাসন
টা ও
কমতে শুরু করেছে। প্রত্যেক বিকেলের
মতো আজও
তুহিনের ফোনে কল আসলো মোহনার।
আগ্রহের
সাথে ফোন তুলল তুহিন।
রোগা রোগা গলায় বলল,
মোহনা : তুহিন আমার গলার টিউমারের
সমস্যা বেড়ে গেছে। এজন্য
গলা অপারেশন
করতে ঢাকা নিয়া যাবে আব্বু। তাই
আগামী ১৫ দিন
কোনো কথা হবেনা বুঝলে। আমার জন্য
দুআ করো আর
ভালো থেকো, বাই।
এক নিশ্বাসে কথাগুলো বলে ফোন
কেটে দিল মোহনা।
অনেক চেষ্টা করেও আর ফোন
গেলনা মোহনার ফোনে।
এই কয়দিন মোহনার জন্য আল্লাহর
কাছে চোখের
জলে প্রার্থনা করলো তুহিন।
১৭ দিন পর।
ফোন আসলো মোহনার নম্বর থেকে।
তুহিন : মোহনা কেমন আছো তুমি?
কতটা মিস
করছিলাম জানো তুমি? কেমন
আছো বলো তাড়াতাড়ি।
মোহনা : অনেক ভালো। তুমি কেমন
আছো?
তুহিন : কে আপনি?
মোহনা : অ্যাই ১৭ দিনেই ভুলে গেলে?
আমি মোহনা।
তুহিন : সেটা তো জানি। কিন্তু তোমার
কণ্ঠ এরকম
লাগছে কেন?
মোহনা : আমার গলার ভয়েস
পালটে গেছে অপারেশন
হওয়ায়।
সব সরল মনে বিশ্বাস করে নিলো তুহিন
আবার চলতে থাকল তাদের
চিরচেনা ভালবাসা।
তুহিন আজ অনেক খুশি। তার
মোহনা তাকে সবার
আগে টিক ১২ টাতে জন্মদিনের
শুভেচছা জানিয়েছে।
কিন্তু এর টিক ৫ দিন পরেই ঘটল তুহিনের
জীবনের
সবচেয়ে বেদনাদায়ক ঘটনা। যেন আকাশ
ভেঙ্গে পড়েছে তুহিনের ছোট্ট মাথায়।
হ্যাঁ এই মোহনা আগের মোহনা ছিলনা।
এই মেয়ের
নাম তৃশা। তুহিনের সাথে সময়
কাটানোর জন্য
তৃশা কে সিম দিয়ে দিয়েছিল মোহনা।
আর
টিউমারের ঐ ঘটনা ছিল সাজানো নাটক
মাত্র।
তুহিনের কাছে মোহনা আর নিজের
ভুলের জন্য মাফ
চাইল তৃশা। তুহিন কোনো উত্তর দিলনা।
নিজের
অজান্তেই চোখের
কোনে লুকিয়ে থাকা জলটুকু
মুছে নিল। আর লাল বাটনে ক্লিক
দিয়ে কেটে দিল
ফোনটা।
আজ চোখের জল টা ও শুকিয়ে গেছে।
তুহিন
জানেনা তার নিষ্পাপ ভালবাসার
সাথে কেন এমন
বেইমানি করল মোহনা।
আজ তার মনের মধ্যে শুধু একটাই নাম
মোহনা আর
মোহনা। সেই নিজ্রন কান্নার আওয়াজ
শব্দোত্তর
তরঙ্গের
মত আছড়ে পড়ে চারদিকে।
এ যেন
হারিয়ে যাওয়া প্রেমকে ফিরে পাওয়ার
আকুতি। এ যেন ভালবাসার কষ্টের
মিছিল।
তুহিন এখনও বিশ্বাস করে তার
মোহনা ফিরে আসবে।
না আসলে মোহনার জায়গায় অন্য কেউ
বসবে। সেই
রাজকন্যার অপেক্ষায় আছে তুহিন।
সে জানে সেই রাজকন্যা আসবে তার
জীবনে। সেই
ভালবাসায় থাকবেনা কলঙ্কের
কোনো ছাপ।
বলেছি হাজার বার
বলিনি আদিত্য,বলেছি হাজার বার।
আমার আরো একটা ছোট বোন আছে।
যে কোন সময় বিয়ের জন্য চাপ
দিতে পারেন আব্বু,কিছু একটা কর। শুনেছ
আমার কথা,এখন কি হবে?
আদিত্যকে কথাগুলো বলছে অরণী। কিন্তু
আদিত্যকে যেন নীরবতা গ্রাস
করে নিয়েছে। কোন কথাই বলছেনা।
রেগে গেল এবার অরণী।
-কি হল? আমার কথাগুলো কানে গেছে?
তুমি কি কিছু
করবে নাকি আমি বিয়েতে মত
দিয়ে ফেলবো?
মুখ তুলে এবার অরণীর
দিকে তাকালো আদিত্য। তারপর সেও
কিছুটা রেগে গিয়ে বললো " তোমার
কি মনে হয় কিছু একটা কর বললেই
করে ফেলা যায়?
এটাকি তুমি বললে,আমার
হাতটা ধরনা প্লীজ আর
আমি ধরে ফেললাম। এরকম কিছু?
সবে পড়াশুনা শেষ হলো।
চাকরী বাকরি এতই সোজা?
-তাহলে এখন কি করা? বিয়ের জন্য
বাসা থেকে কি পরিমাণ প্রেসার
যে দিচ্ছেন তা বলার না।
অরণীর কণ্ঠ দিয়ে হতাশা আর অসহায়ত্ব
মিলে মিশে একাকার।
-তুমি এক কাজ কর বাসায় যাও।
দেখি কি করা যায়?
আদিত্যের মাঝেও আত্মবিশ্বাসের বড্ড
অভাব দেখা যাচ্ছে।
অরণীর কিছুই করার নেই। অনেক দিন
বাড়ীতে মাস্টার্স শেষ করার অজুহাত
দেখিয়ে বিয়ে ঠেকিয়ে রেখেছিলো।
গেল সপ্তাহে মাস্টার্স এর রেজাল্ট
হতেই যেন বিয়ে সংক্রান্ত বিষয় গুলির
বিষ্ফোরণ ঘটেছে। আদিত্য এখন গভীর
চিন্তায় মগ্ন। কিছুই আর বলবেনা সে।
অরণী তাই আদিত্যের কাছ থেকে বিদায়
নিয়ে চলে গেল। আদিত্য অরণীর
চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলো।
দৃষ্টি সীমার
অপারে চলে যাওয়া অবধি আদিত্য
চেয়ে রইলো। তারপর উঠে দাঁড়ালো। এখন
সে আলো খাবে। সূর্যের আলো।
আদিত্যের যখন খুব মন খারাপ বা মেজাজ
গরম হয়ে যায় সে তখন চোখ বন্ধ
করে সূর্যের
দিকে হা করে দাঁড়িয়ে থাকে। খুব
কাজে দেয়। এভাবেই অরণীর
সাথে ক্যাম্পাসে পরিচয় হয়। আদিত্য
সেদিন তার বেস্ট ফ্রেন্ড ঈশানের
সাথে ঝগড়া করেছিলো। তারপর
রাগে আর দু:খে রোদে দাঁড়িয়েছিল
হা করে।
অরণী সেটা দেখে থমকে দাড়িয়েছিলো সেদিন
তার পাশে। ভয়ে কিছু বলতেও
পারছিলোনা। চুপচাপ দেখছিল আদিত্যের
আলো পান। আদিত্য হঠাৎ দেখে ওর
পাশে এক মেয়ে। অরণী সাথেই সাথেই
প্রশ্ন করেছিল"কি করছিলেন আপনি!
-সূর্যের তাপ নিয়ে মনটাকে শান্ত
করছি।
-হোয়াট?
-বাংলা বললাম বুঝলেননা? সান লাইট।
- সূর্যের আলোতে ভিটামিন
থাকে জানতাম কিন্তু
এভাবে হা করে সেই ভিটামিন খায় কেউ
আজ দেখলাম। -হুম দেখেছেন
তবে ভেবেছেন ভুল। আমি ভিটামিন
নিচ্ছিলামনা,আমি
-দিচ্ছিলেন!কি আর কাকে?
-কাউকে না। সূর্যের আলোতে আমার
রাগ আর দু:খটা মিশিয়ে দিচ্ছিলাম।
-হাও ইন্টারেস্টিং। ব্যাখ্যা করবেন
একটু?
-আসলে ব্যাখ্যার কিছু নাই। একেক
মানুষের একেক ধারণা বা অভ্যাস থাকে।
আমার অভ্যাস মন খারাপ হলে সূর্যের
আলোতে হা করে দাড়ানো। রাগ
করলেও। আমার একটা বিশ্বাসও
বলতে পারেন। সূর্যের আলো রাগ,মান-
অভিমান,দু:খ সব কিছু গ্রাস করে নেয়।
তবে ঠিকমতো মন থেকে সূর্যকে আহবান
করতে হবে।
এইভাবেই ব্যাখ্যা করেছিল আদিত্য
সেদিন। অরণী তখন উল্টো প্রশ্ন
করেছিলো "যেদিন আকাশ
মেঘলা থাকে বা বৃষ্টি হয় সেদিন সান
লাইট পাবেন কই?
অরণীর প্রশ্নে আদিত্য সেদিন
বলেছিলো "বৃষ্টি থাকলে মন
ভালো করার এই পদ্ধতি কাজ
করেনা,তাছাড়া বৃষ্টির সময় মন খারাপও
হয়না।
তবে মেঘলা থাকলে প্রক্রিয়াটা ধীর
গতিতে হয়।
-বাহ খুব মজারতো।
-হতে পারে। তা আমি যাই এখন।
বলেই আদিত্য হাটা শুরু করলো। পেছন
পেছন ছুটে এল অরণী।
-আপনার নামটা?
-আদিত্য।
-আমি অরণী।
"অহহ। উত্তরে এটুকুই বলেই আবার
চলতে শুরু করেছিলো আদিত্য।
এটাই ছিলো আদিত্য আর অরণীর প্রথম
আলাপ। আর সেদিনই আদিত্যকে অরণীর
ভালো লেগে গিয়েছিলো।
-এই ছেলে তোমার নাম আদিত্য?
চিন্তার দুনিয়া থেকে আচমকা যেন
বাস্তবে ফিরে এলো আদিত্য। মুখ বন্ধ
করে পাশে চেয়ে দেখে এক
মাঝবয়সী মানুষ। বেশ স্মার্ট। নাকের
ডগায় খয়েরী ফ্রেমের চশমা। এই টাইপ
মানুষের মাথায় চুল কম থাকে কিন্তু এই
ভদ্র লোকের মাথায় যথেষ্ট চুল।
সমস্যা চুলে নয়। সমস্যা অন্যখানে।
মানুষটাকে খুব চেনা চেনা লাগছে।
কোথায় যেন দেখা হয়েছে আগে এমন
মনে হচ্ছে আদিত্যের। কিন্তু
মনে করতে পারছেনা।
-কি হল চুপ করে আছ কেন,তুমিই
তো আদিত্য তাইনা?
লোকটার কণ্ঠে আর চেহারায়
একটা বিরক্তির ছাপ। ভ্রু কোঁচকে আছে।
-জ্বী আমি আদিত্য। কিন্তু
আপনাকে তো চিনলামনা!
-চিনার কথা না। আমাদের
আগে কোনদিন দেখা হয়নি।
আমি তোমার ওই উদ্ভট
পাগলামী দেখে চিনেছি। সূর্যের
দিকে হা করে দাঁড়িয়েছিলে দেখেই
বুঝেছি তুমি আদিত্য।
বসে বসে চা খেতে তোমার সাথে আলাপ
করার রুচি আমার নেই। ঐ দিকটায়
আস,গাছের নীচে। তোমার
সাথে কথা আছে।
একথা বলে আগন্তুক ব্যাক্তি সামনের
বিশাল কৃষ্ণচূড়া গাছের
দিকে হাটা ধরলেন। আদিত্য
যাবে কি যাবেনা ভাবতে ভাবতে পেছন
পেছন গেল। মানুষটা গাছের নীচে গিয়েই
বুক পকেট থেকে সিগারেটের প্যাকেট
বের করে একটা সিগারেট ঠোঁটে নিলেন।
-তোমার কাছে লাইটার
আছে বা দিয়াশলাই?
আদিত্যের কাছে দিয়াশলাই আছে কিন্তু
বললো, -জ্বী না,নেই।
-আমার মনে হচ্ছে আছে।
তুমি মিথ্যা বলছো। ভদ্রতাও দেখাচ্ছ
বলা যায়। বাবার বয়সী লোক আমি। তাই
না? এত ভদ্রতা দেখানোর প্রয়োজন নেই।
আমি তোমার
বাবা,চাচা বা মুরব্বী কোন আত্মীয় না।
দাও,আগুন দাও।
আদিত্য ফায়ার বক্সটা বের করে দিল।
আদিত্য তার মস্তিষ্কের প্রতিটা সেলের
সাথে লড়ছে। মানুষটাকে পরিচিত
মনে হচ্ছে কেন!
কূলকিনারা পাচ্ছেনা আদিত্য
প্রশ্নেটার।
সিগারেট ধরিয়ে দিয়াশলাইটা ফিরত
দিতে দিতে ভদ্রলোক কথা শুরু করলেন
আবার।
-আমার ছোট মেয়ের মুখে তোমার
কথা শুনতে শুনতে কান
ঝালাপালা হয়ে গেছে। আমার ছোট
মেয়ের নাম আদ্রিতা। ওর বড় বোন ওর
সাথে সব শেয়ার করে। আর
সেগুলো আদ্রিতা আমাকে বলে।
বুঝতে পারছো এবার আমি কে?
অরনীর বাবা!!! ওহ গড। আদিত্য
মনে মনে নিজেকে থাপড়ালো। এই সহজ
বিষয়টা ধরতে পারেনি বলে। অরণীর
চেহারার সাথেই মিল
খোঁজে পাচ্ছিলো এতক্ষন।
অরণী যদি জানে একবার আমি ওর
বাবাকে সিগারেট
জ্বালানোর জন্য নিজের পকেট
থেকে দিয়াশলাই বের
করে দিয়েছি! আর কিছু
ভাবতে পারলোনা আদিত্য।
-কি হল তোমার,কি ভাবছ?
-জ্বী না কিছু না।
-শুনো আমি যেদিন প্রথম আদ্রিতার
কাছে জানতে পারি যে,অরনী একটা আলো খাওয়া ছেলেকে পছন্দ
করে সেদিনই বুঝেছিলাম
ছেলেটা ধান্দাবাজ হবে। কারণ
এইসব উদ্ভট কাজ কারবার
যারা করে তারা মানুষকে মুগ্ধ
করে ফেলে সহজে। আর এটাই তাদের
টোপ। টোপ
ফেলে একটা বাজে ছেলে আমার
মেয়েকে পটিয়ে ফেলেছে এটা ভাবতেই
আমার সারা শরীর রাগে কাঁপতো।
বুঝেছো?
-জ্বী।
-জ্বী মানে? তোমার কিছু বলার নেই?
-জ্বী না।
-কেন?
অরনীর বাবার ফর্শা মুখ
লালচে হয়ে যাচ্ছে। উনি রেগে যাচ্ছেন।
-আমার সাথে দেখা হবার
আগেইতো আপনি আমাকে জায
করে ফেলেছেন। ধারনা তৈরী করেছেন
আমার সম্পর্কে। আর
ধারণা বা বিশ্বাস খুব শক্ত জিনিস।
আমি কিছু বললেও আমার
সম্পর্কে আপনার ধারণা বদলে যাবেনা।
-তার মানে আমার ধারণা ভুল?
তুমি আমার মেয়েকে তোমার
উদ্ভট কর্ম কাণ্ড দিয়ে মুগ্ধ করনি?
-না।
-ব্যাখ্যা কর।
-আপনার ভাষায় আমার উদ্ভট কাজ
দেখে আপনার মেয়ে মুগ্ধ
হতে পারে কিন্তু আমি ওকে মুগ্ধ করার
জন্য কিছু করিনি।
অরণীর সাথে আমার পরিচয় তিন বছর
ধরে আর আমি সূর্যের
আলো দিয়ে মন ভালো করি,রাগ দূর
করি ২০ বছর আগে থেকে।
সুতরাং অরণীর প্রতি আমার
ভালবাসাটা কোন টোপ না।
তাছাড়া আপনি এগুলিকে উদ্ভট উদ্ভট
না বললে আমি খুশী হব। কারণ
আমি পাগল না।
-
শুনো ছেলে আমি তোমাকে খুশী করতে আসিনি এখানে।
জানাতে এসেছি আমার মেয়ের বিয়ে।
ওর সাথে যোগাযোগ না রাখলেই
ভালো করবে।
-জ্বী আচ্ছা।
-জ্বী আচ্ছা মানে? কিছু বলবেনা এ
বিষয়ে?
-আমি কিছু বলি সেটাই কি চাচ্ছেন?
-বলতে পার অনুরোধ ছাড়া। তোমার
কাছে আমি আমার
মেয়ে বিয়ে দেবনা কোনদিন।
-আপনার অরণীর সুখ চাইলে অন্যকোথাও
বিয়ে না দিলেই
ভালো হবে।
-তোমার
কাছে বিয়ে দিলে সে সুখী হবে! হাউ
ফানি!
ওর ক্ষুধা লাগলে কি ওকে সূর্যের
আলো খাওয়াবে? কি কর তুমি,বাপের
কি আছে?
-কিছুই নেই
হয়তো তবে আমি যা খেয়ে বেঁচে আছি সেও
তাই খেয়ে বেঁচে থাকতে পারবে।
-শুধু তিন বেলা খেলেই জীবন ধারণ
করা যায়না।
-আমাকে এসব শুনাচ্ছেন কেন তবে?
আপনি অরণীকে যেকোন জায়গায়
বিয়ে দিতে পারেন। আমার সমস্যা নেই।
-তোমার সমস্যায় আমার কি আসে যায়?
-যায়না,তবুও আশ্বস্থ করলাম।
ফায়ারবক্সটা আবার
দাও,আরেকটা সিগারেট ধরাতে হবে।
বাধ্য ছেলের মতো ফায়ারবক্স বের
করে দিল আদিত্য। এখন আর ভদ্রতার
মানে নেই।
-আচ্ছা তুমি কি আমাকে ইম্প্রেশ করার
জন্য কিছুই করবেনা?
মুখ ভর্তি ধূয়া ছাড়তে ছাড়তে প্রশ্ন
করলেন অরণীর বাবা।
তেমন কিছু করলে সেটা টোপ
ফেলা হয়ে যাবেনা? আপনিই
তো বললেন আমি টোপ
ফেলে মানুষকে মুগ্ধ করি।
-আমি এত উজবুক
না যে তুমি উল্টা পাল্টা কিছু করলে আর
আমি আহ্লাদে গদগদ হয়ে বললাম,
বাবা আমার অরণীর জন্য তুমিই
পারফেক্ট।
-আসলে আপনাকে মুগ্ধ করার ইচ্ছা আমার
নেই। সত্যি কথা বলতে কি কাউকে মুগ্ধ
করার কোন স্পেশাল একটিভিটিজও
আমার জানা নেই। আমি যা করি সবই
আমার জন্য স্বাভাবিক। আপনি যেমন
শরীরের কোন ব্যাথার জন্য পেইন কিলার
নেন আমি তেমনি কষ্ট পেলে আলো নেই।
আপনার মন খারাপ হলে হয়তো গান শুনেন
আমি আলো নেই। এই সূর্যের আলোই
আমার সব। তাই আমাকে পাগল ভাবার
কিছু নেই। সবারই কিছু চিন্তা ধারা আর
নিজস্ব জগত থাকে।তাছাড়া আমি কোন
জোকার না কিংবা চিড়িয়াখানার
চিড়িয়া না, যে কেউ চাইলো আর
আমি তাকে ইম্প্রেশ করা শুরু
করে দিলাম।
ইচ্ছে করেই এভাবে বললো আদিত্য
যাতে অরণীর বাবা রেগে যান।
-হোয়াট!আমাকে তুমি যে সে বলছো?
ডাক্তার আনোয়ার পারভেজ
এফ,সি,পি,এস কে তুমি যে সে বলছো? হু
দ্যা হেল ইউ আর? ইউ আর এ চিপ এন্ড
স্টুপিড পোর ম্যান।
রাগলে অরণীর
বাবা ইংরেজীতে গালাগালি করেন।
এখনো তাই করছেন।
-আমি কি আমি জানি। আর আপনিও জন্ম
থেকে এফ,সি,পিএস আনোয়ার পারভেজ
না। আমার মনে হয় এখন যাওয়া উচিৎ
আমার। আমার আমিত্বের
পরীক্ষা দিতে আমি বাধ্য নই।
-অফকোর্স। গ এওয়ে ফ্রম হিয়ার
ইমিডিয়েটলি এন্ড লিসেন আই ডোন্ট
ওয়ানা সি ইয়র ফেইস এগেইন।
-শুনলাম কিন্তু
কথা দিতে পারলামনা,কারণ
পৃথিবীটা গোল। আচ্ছা স্যার
ভালো কথা ডাক্তাররা কি ডাক্তার
দেখাননা কখনো?
-কি বলতে চাচ্ছ?
-মানুষকে প্রেসক্রিপশনে লিখে দেন
ধুমপান নিষেধ অন্যদিকে নিজেই সেই
নিষিদ্ধ জিজিনিস অবিরত নিচ্ছেন। এর
উপর এত রাগ! আপনার একজন
সাইক্রিয়াটিক দেখানো উচিৎ মনে হয়।
আনোয়ার পারভেজ সাহেব এবার আর
কোন ভাষায়ই কোন কথা বলতে পারলেন
না। কারণ তিনি আদিত্যের
কথা শুনে রাগে থরথর করে কাঁপছেন।
আদিত্য সেটা যেন খেয়ালই করলোনা।
-আপনার মেয়েকে আপনি আমার
কাছে কোনদিন
বিয়ে দেবেননা,তাছাড়া আপনি আমার
বাবা,চাচা বা মুরব্বী আত্মীয়ও না।
তাই একটা কথা বলার ছিল।
-কি!
অনেক কষ্টে শব্দটা উচ্চারণ করলেন
অরণীর বাবা।
-আসলে আমার পকেটে এই মূহুর্তে কোন
টাকা নেই। যদি আমাকে দুইটা সিগারেট
দিতেন তবে উপকার হতো।
পকেট থেকে সিগারেট এর
প্যাকেটটা বের করে রাস্তায়
ছুড়ে মারলেন পারভেজ সাহেব।
খুবই শান্ত আর স্বাভাবিক
ভাবে প্যাকেটটা তুলে নিল আদিত্য।
দেখলো দুইটাই অবশিষ্ট আছে। পেছন
ফিরে বললো
-অনেক ধন্যবাদ,আসি স্লামালিকুম।
তারপর হাটা শুরু করলো সে।
****
বিশ মিনিট পর অরণীর ফোন এল আদিত্যর
কাছে। কণ্ঠে চাপা উত্তেজনা।
-তুমি কোথায়?
-বাসায়।
-আব্বাকে কি শিখিয়ে দিয়েছ তুমি।
-তোমার আব্বাকে আমি পাব কোথায় আর
কি শিখাবো?
-মিথ্যা বলবেনা।
-আমি তোমার আব্বুকে চিনিই
না তুমি জান।
-জানি,মজা করলাম। মজার এক কাণ্ড
ঘটেছে আজ।
-কি?
-আব্বু বাসায় এসে উনার ব্যাগটা রেখেই
ছাদে চলে এলেন হনহন করে। আমি আর
আদ্রিতা পিছু পিছু
এসে দেখি উনি সূর্যের
দিকে হা করে করে আছেন অবিকল
তোমার মতো।
-হুম।
-হুম মানে! তোমার কাছে অস্বাভাবিক
লাগছেনা?
-না,রাগ লাগছে। উনি আমার কনসেপ্ট
পাইলেন কই?
-কিভাবে পেয়েছেন তাও জানি।
-কিভাবে?
-আদ্রিতা। আদ্রিতা আজ
আমাকে বলেছে সে নাকি তোমার সব
কথা আব্বাকে বলে দিয়েছে। বজ্জাত
মেয়েটাকে আমি বিশ্বাস করে বলতাম
সব আর সে আব্বুর কাছে পাস করে দিত
সব।
-তা তোমার আব্বু কোথায় এখন?
-অই তো আলো গ্রহন চলছে। হাহাহা।
আচ্ছা আমি রাখছি এখন।
-ওকে বাই।
***
অরনীকে ডাকছেন বাবা।
-জ্বী আব্বু?
-অরণী,ওই যে পাগল ছেলেটা, কি যেন
নাম?
-কোন ছেলে বাবা?
-ন্যাকামো করবিনা,এক চড় খাবি।
যে ছেলের সাথে ইয়ে করে বেড়িয়েছ
এতদিন ধরে।
-আদিত্য বাবা।
-হে হে আদিত্য। ওই আলোখোর
ছেলেটাকে আমার
সাথে দেখা করতে বলবি।
ফ্যানের সাথে ঝুলছে
সিলিং ফ্যানের
সাথে ঝুলছে একটি লাশ।লাশের কোন
নাম হয়না।তবে যার দেহ তার নাম
সাবরিনা।সে কিছুদিন
আগে এস.এস.সি দিয়েছে।তার
পরিক্ষা যদিও তেমন ভাল
হয়নি তবে তার আশা ছিল সে পাশ
করে যাবে।রেজাল্ট দেওয়ার সময়ও
ঘনিয়ে এল।তবে আত্মহত্যার কারন তার
এটি নয়।কারন সে ৩মাসের অন্ত:স্বত্তা!
সে যে দিন প্রথম বুঝতে পারল,তার
দেহের মাঝে কিছু পরিবর্তনের
আভাস,সাথে সাথেই ইমরানকে ফোন
দিল।ইমরান তার বয়ফ্রেন্ড।গত ৮মাস
যাবত তাদের রিলেশন।
-"আমার খুব ভয় হচ্ছে,ইমরান।তুম
কর।"
~"আরে দুর,এটা তেমন কিছুই না।তোমার
মনের ভয়।আর কিছুদিন দেখ।তারপরই ভয়
দুর হয়ে যাবে।"
-"না!আমি শিওর কিছু হয়েছে।প্লিজ কিছু
কর।"
~"আমি কি করব!আমি কি ডাক্তার
নাকি?"
-"না তুমি ডাক্তার না।তবে তুমি তার
কাছে আমায় নিয়ে যেতে পারো!"
~"দেখি!সময় করে নেই।আর
প্লিজ,আমি একটু ঝামেলায়
আছি,আমাকে এভাবে হুটহাট ফোন দিও
না।"
......ইমরানের সময় করা আর হল না।
সাবরিনা টের পাচ্ছে তার পরিবর্তন।এমন
একটি অবস্থায় সে রয়েছে,পরিবারকেও
বলতে পারছে না কিছু।সে কি তার
মা কে জানাবে?না!
সে বলতে পারবে না।ঢেকুরে কেঁদে উঠল
সাবরিনা।কি ভুলটা করল সে?কেন
এভাবে সপে দিল তাকে?কিছু সময়ের
আনন্দের জন্য জীবনে এতবড় ভুলের
সম্মুখীন হতে হল!
তাই ঝুলছে সে।সিলিং ফ্যানে।তার এ
ছাড়া আর কোন পথ ছিল না......
উপরের লিখাটি কাল্পনিক।গত কয়েক বছর
যাবত এমন অনেক
লিখা পড়েছি পত্রিকায়,শুনেছি
কাছে।কিন্তু গত কয়েকদিন আগে এমনই
একটি সত্য ঘটনা জানলাম।যদিও
মেয়েটি আত্মহত্যা করেনি।সে তার
পরিবারকে জানিয়েছে।তবে কজনই
এটা করে?
আজকাল প্রেম ভালোবাসার নামে কিছু
বেজন্মা এমনটাই করে আসছে।আর এসব
বেজন্মার ফাঁদে পা দিচ্ছে অনেক
বোকা,চালাক,আধুন
বা ভালবাসা একটি পবিত্র নাম।আর এ
নামের সাথেই প্রতারনা করছে কিছু
হাতেগনা মানুষ।এদের
সংখ্যা হয়তো নেহায়েত কম।কিন্তু
এরা আছে।এরা ছিল।
হাতে গনা কয়েকটি বেজন্মার জন্যই
অন্যদেরও, যারা সত্যকার অর্থেই
ভালোবাসা বা প্রেমের অর্থ
জানে,প্রেম বুঝে,মানে তাদেরও অন্য
চোখে দেখা হয়।
আজকাল " সে প্রেম করে" কথাটা শুনলেই
মেয়েটার
দিকে চোখটা ডানহাতে কঁচলিয়ে দেখে!
যেন সে "কি না কি" করে ফেলেছে!
কেন?কারন হাতে গনা কিছু, ওই
যে বললাম,"বেজন্মা"
সতর্ক হোন সবাই।জীবন খুবই মুল্যবান।
এজীবন আরো মুল্যবান
হয়ে পড়ে সত্যিকারের সঙ্গীর সংঙ্গতে।
আর জীবন মূল্যহীন
বা নিভে যেতে পারে আপনার
সঙ্গী নির্বাচনে ভুলের কারনে।
ভালো তাকেই বাসুন যে আপনার
ভালোবাসার
প্রতিটি ভালো লাগা মূহুর্তকে ভালোবাসাময়
করে তুলতে পারে।
যে আপনাকে ভালোবাসার
লোভে ভালোবাসবে।আপনার
লোভে নয়।।
ট্রানজিট অব হ্যাডেস
মাথার উপর হাজার তারার
মেলা বসেছে ।
চারিদিক সুনসান । তারই
মাঝে আলখেল্লা পরা এক
ব্যক্তি হেঁটে যাচ্ছেন অন্ধকার
রাস্তা ধরে ।
হাঁটার মাঝেই রাজকীয়তার ছাপ
পাওয়া যায়
। সুঠাম দেহ ও শক্তসমর্থ । আজ তার
সাথে তার সূর্যরথ নেই , নেই তার
তীরধনুক ।
এ্যাপোলো আজ একাই এসেছেন ।
তিনি চিন্তিত , একটি বিশেষ বিষয়
নিয়ে ।
তার গন্তব্যস্থল পাতালপুরীর অন্ধকার
রাজ্য ,
হ্যাডেস ।
তার চাচা হ্যাডেসের কাছে যাচ্ছেন
তিনি ,
জিউস পাঠিয়েছেন ।
যদিও তাদের মাঝে রুক্ষ সম্পর্ক , কিন্তু
আজ
জিউস বাধ্য হয়েছেন ।
এ্যাপোলো দ্রুত পা চালালেন ।
কদিন আগের কথা ।
ভেনাসের বাইরের পথে উড়ছিলেন
হারকিউলিস ।
সাথে প্রিয় ঘোড়া পেগাসাস । হঠাত্
থমকে গেলেন ।
তার সামনে নিকষ কালো একটি দেয়াল ।
দেখে মনে হচ্ছে আলোও
শুষে নিচ্ছে দেয়ালটি । হঠাত্
একটি দরজামতো জায়গা খুলে গেল । আর
গোধুলীর আবীর রঙা আলোর চেয়েও
মায়াবী আলো ঠিকরে বেরুতে লাগলো ।
পেগাসাস থেকে নামলেন হারকিউলিস ।
আলোটা তাকে টানছে । এবং একসময়
হারিয়ে গেলেন বীরদের বীর
হারকিউলিস ।
হ্যাডেসের প্রাসাদ , গম্ভীর
মুখে বসে আছেন
এ্যাপোলো ।
তার চাচা কিছুই বলতে পারছেন
না ট্রানজিট
অব হ্যাডেসের ব্যাপারে । যদিও
পথটা হ্যাডেসেই শুরু হয় , শেষ হয়
স্বর্গরাজ্যে ।
কোনো দেবতা পথটা তৈরি করেন নি ।
খালি যেন একটা পথ নয় , বিশাল অংশ
জুরে তার স্থান ।
এ্যাপোলো লজ্জিত , কারণ তার সূর্যের
আলোও
যে পথটির কাছে পৌঁছাতে পারেনা ।
তবে তার বোন আরতেমিস দেখেছিলেন
পখটিকে । চন্দ্রদেবী আরতেমিস
কোনো এক
পূর্ণিমায় তার খোঁজ পেয়েছিলেন । এমনই
নিকষ কালো তার দেয়াল । এখানেই
হারিয়ে গেছেন হারকিউলিস । উদ্বিগ্ন
জিউস তাই হ্যাডেসের কাছে পাঠান
এ্যাপোলোকে ।
কিন্তু আশাহত হতে হয় তাকে । ব্যাথিত
মনে অলিম্পাসে ফিরে যান এ্যাপোলো ।
জিউসের সভা , সকল
দেবদেবীরা এসেছেন ।
আলোচ্য বিষয় - ট্রানজিট অব হ্যাডেস ও
হারকিউলিস ।
কিন্তু কোনো কাজ হলনা ।
কেউ জানেনা , কেউ দেখেনি সে পথ ।
সভার
শেষে জিউস একটি চিঠি পেলেন ।
নেপচুনে দেখা করতে হবে তাকে । প্রেরক
অজ্ঞাত ।
তৈরি হলেন জিউস ।
পৃথিবীর ছোট্ট একটি গ্রাম , কাচনিয়া ।
একটা বাসায় ভিড় দেখা যাচ্ছে ।
একটা মহিলাকে কাঁদতে দেখা যাচ্ছে ।
তার
ছেলে ইউবিপ্রাইম গতকাল মারা গেছে ।
তার
প্রেমিকা লামিন্দ্রিলা মারা যাওয়ার
মাত্র
তিন মাসের মাথায় সেও চলে গেল তার
প্রেয়সীর কাছে ।
খালি বাইরে একটা পাগল বকবক করছে ।
সে বলছে যে সে দেখেছে একটা অদ্ভুদ
আলোতে ইউবিপ্রাইমকে হারিয়ে যেতে ।
কে শোনে কার কথা ।
নেপচুনের বাইরে দাঁড়িয়ে আছেন জিউস ।
কে পাঠাতে পারে তাকে চিঠিটা !
না আর
ভাবতে হলো না তাকে । কিন্তু এ
কাকে দেখছেন তিনি ! এ
যে অ্যাফ্রোদিতি !
ভালোবাসার দেবী এমন ভয়ংকর একটি পথ
তৈরি করেছেন !
অ্যাফ্রোদিতি আসলেন , " ক্ষমা করবেন
মহারাজ , কিন্তু আমি সবার
সামনে বলতে পারতাম না ।" জিউস
সংযত
থাকলেন । বললেন ," হারকিউলিস
কোথায় ?"
দেবী উত্তর দিলেন ,"
তিনি ভালো আছেন ,
ট্রানজিট অব হ্যাডেসে ।" জিউস
রেগে গেলেন," কী এটা ? সব খুলে বলুন ।"
-" বলছি মহারাজ , ট্রানজিট অব হ্যাডেস
কোনো দেবতার সৃষ্টি নয় , এর স্রষ্টা হল
মানুষ , তাদের আবেগ ।
এটা সরাসরি স্বর্গে যাওয়ার রাস্তা ।
যে মানুষেরা পৃথিবীতে সত্যিকারের
ভালোবাসার নিদর্শন
দেখিয়েছে তারাই
কেবল এতে স্থান পায় ।
এটি ভালোবাসায়
তৈরি , বলতে পারেন স্বর্গের চেয়েও
সুখের
স্থান । "
জিউস অবাক হলেন," তাহলে এটি এত
অন্ধকার
ও শক্ত কেন ?"
অ্যাফ্রোদিতি হাসলেন ,"এর কারণও
মানুষ ,
মহারাজ ।
বর্তমান দুনিয়ায় ভালোবাসার
নামে অশ্লীলতা , ছলচাতুরী , প্রতারণার
খেলায় মেতেছে মানুষ । সত্যিকারের
ভালোবাসা দুর্লভ হয়ে গেছে ।
ভালোবাসাকে নিজেদের
চাহিদা মেটাবার
মাধ্যম ভাবতেই সবাই উদগ্রীব ।
বাবা মা বুড়ো হয়ে গেলে আর খোঁজ নেয়
না সন্তানেরা , পরিবারকে সময় দেয়
না ,
সামাজিক মূল্যবোধ বিলুপ্তপ্রায় । আর
এসবকিছুই ট্রানজিট অব হ্যাডেসের
দেয়ালরূপে কাজ করে । যত
এগুলো বাড়বে ,
ততই এই দেয়াল কালো ও শক্ত হবে ।
কারণ
প্রকৃত
ভালোবাসা সহজে পাওয়া যাবে না ।
আর
যারা এতসব বাঁধা অতিক্রম করবে ,
তারাই এই
পথের খোঁজ পাবে যে পথ চিরশান্তির ,
যার
শেষ স্বর্গরাজ্যে । অপবিত্রের
ভিড়ে যারা পবিত্র থাকবে , তারাই এই
কালোপথের কঠোর দেয়ালকে পরাজিত
করতে পারবে ।"
-"আর হারকিউলিস ?"
-"তিনি তো মেগারার জন্য
ভালোবাসার
অভূতপূর্ব নিদর্শন রেখেছেন । তাই
ট্রানজিট
অব হ্যাডেস তাকে অতিথি হিসেবে বরণ
করে নিয়েছে ।"
......
-"ঠিক আছে দেবী , কথা দিচ্ছি , এ
কথা কেউ
জানবেনা ।"
-"ধন্যবাদ মহারাজ , আমি যাই তাহলে ।"
ট্রানজিট অব হ্যাডেস , ইউবিপ্রাইম
ভাবছে ,
এ কোথায় এলো সে !
এবং হঠাত্ !
কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকল সে , এ
যে অবিশ্বাস্য !
আর পারল না । দুজনে দুজনের
দিকে ছুটে গেল
। হ্যাঁ , এ যে তারই লামিন্দ্রিলা ,
অবশেষে !
হেসে ফেললেন হারকিউলিস , এই জুটির
কান্ড
দেখে । পাশেই
দাঁড়ানো মেগারাকে বললেন ,"
চলো ,অনেক কথা যে বাকি " মেগারার
মিষ্টি হাসিমাখা উত্তর , "চলুন প্রিয়
" ........
(কী ? অবিশ্বাস্য ? না , প্রকৃত
ভালোবাসা খুঁজুন , অশ্লীলতা বাদ দিন ।
কে জানে , হয়ত
খোদা বানিয়ে রেখেছে কোথাও
আপনার জন্য,
ট্রানজিট অব হ্যাডেস : এ ওয়ে টু হেভেন)
সুন্দর ভালোবাসার গল্প
উত্তরমুছুনআপনার চাইলে আমার সাইট থেকে ব্যাক লিংক নিতে পারেন
উত্তরমুছুনখুব ভালো।valobasa79.blogspot.com
উত্তরমুছুনvalo laglo. post korte thakun. vromon, golpo, kobita, technology and health related pot porte tripretreatBD blog visit korun. valo lagle share korun.
উত্তরমুছুনNice post. Thanks for sharing. Please visit my bangla tech blog as well. Techitunes BD bangla blog is solely dedicated to technology news, bangla tutorials and tips, bangla tech-review and software download link.
উত্তরমুছুনভালো গল্প ছোটদের গল্প রূপকথার গল্প ছোটদের রূপকথার গল্প
উত্তরমুছুন