মিষ্টি বন্ধন - জ্যোতি
--কোথায় ছিলে এতোক্ষণ???(সাগর)
--কেন???(রুমি)
--আমি তোমায় কতক্ষণ থেকে খুঁজছি।
--ওহহ খুঁজছো!!!তো কোথায় কোথায় খুঁজেছো আমায়???
--কেন!বেডরুমে,কিচেনে,বাথরুমে....
--ইশ,,,তোমার খুব কষ্ট হয়েছে তাই না আমায় এতো জায়গায় খুঁজতে।তোমার নিশ্চয়ই পা ব্যথা করছে আমায় এতো জায়গায় খুঁজতে..!
--হুমম একে তো অফিসে সারাদিন কতো কাজের চাপ।আবার বাসায় ফিরে তোমায় খুঁজতে শরীরটা আরো খারাপ লাগছে।
--ওহহ আমার সোনা রে,,,চলো তোমার হাত পা টিপে দিই।
--সত্যিই দেবে!!!
--হুমম দেবো তো।সাথে তোমার গলাটাও টিপে দেবো শয়তান কোথাকার।।।
--এই রুমি তুমি আমায় হঠাৎ করে আমায় এরকমভাবে গালাগালি করছো কেন??
--আমি তোমায় গালাগালি করেছি তাই না?
--হুমম করছো তো।
--তাহলে তোমায় এছাড়া আর কি করবো একটু বলবে...
--কেন!কি করেছি আমি??
--আরে না তুমি আবার কি করবে,,,তুমি তো কিছু করতেই পারো না।তুমি তো এখনো একটা পিচ্চি ছেলে।
--হুমম আমি পিচ্চি তো।হা হা হা।
--চুপ করো।হাসবা না তুমি
--কেন তুমি এতো রাগ হয়েছো রুমি???
--তুমি মিথ্যে বলেছো সাগর।আর তুমি মিথ্যে বললে আমার কষ্ট হয়।
--কি মিথ্যে বলেছি আমি রুমি?
--বলবো না।যাও
--তা কি করে হয়।তোমাকে তো বলতেই হবে আমি কি মিথ্যে বলেছি।বলো না রুমি
--তুমি সেই কখন অফিস থেকে এসেছো।
--কখন এসেছি???
--অনেকক্ষণ আগে।এসেই তুমি ঘুমিয়ে পড়েছো।আমার কোনো খোঁজ নাও নি।
--ওহহ তুমি জানো যে আমি অনেকক্ষণ আগে এসেছি!!!
--হুমম জানতাম।তুমি যখন এসেছো আমি তখন ছাদে ছিলাম তোমার জন্য অপেক্ষা করছিলাম।
--আই এ্যাম সরি রুমি।আসলে আজ আমি খুবই ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলাম অসিফ থেকে এসে।তাই একটু শুতে না শুতেই কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছি তা বুঝতেই পারি নি।আমায় প্লিজ ক্ষমা করো দাও লক্ষীটি।
--আমি তোমায় কি কিছু বলেছি!!!
--না,,,এখনো তেমন কিছুই বলো নি।
--তাহলে এতো ব্যাখ্যা দিচ্ছ কেন তুমি সাগর?
--ওই যে তুমি একটু পর উত্তেজিত হয়ে পড়ছে চিৎকার করতে করতে।তাই আমি নিজেই আগে থেকে সব বলে নিলাম।
--জানো সাগর কারো কোনো কথায় আমার একটুও কষ্ট হয় না।কিন্তু তোমার ছোট ছোট কথায় আমার খুব কষ্ট হয়।
--সরি।আর কখনো এমন ভুল হবে না।
--প্রমিস।আর কখনো আমার সাথে মিথ্যে বলবে না ঠিক আছে?
--যো হুকুম মহারানি
--হি হি হি।জানো আমার একা একা থাকতে খুব ভয় হয় সাগর।
--কিসের ভয় আমার রুমির???আমার রুমি তো ব্রেইভ গার্ল।
--হুমম তুমি পাশে থাকলেই শুধু আমি ব্রেইভ গার্ল।আর অন্য সময় আমি ভয়ে কুচকে থাকি।
--কিসের ভয় তোমার??
--জানি নি।হয়তো তোমায় হারানোর ভয়।আমার কেন যেনো মনেহয় আমি তোমার থেকে অনেক দুরে সরে যাবো সাগর....
--এই পাগলি কি হয়েছে তোমার!কি বলছো এসব তুমি!শান্ত হও,,,এখানে চুপটি করে বোসো।কিচ্ছু হবে না তোমার..আমি আছি না।
--তুমি আছো বলেই তো আসি এখনো আছি।
--আর এসব কথা বলবে না।আমার খু্ব কষ্ট হয় রুমি।আমি তোমায় খুব ভালোবাসি সেটা কি তুমি জানো না!
--জানি।আমিও তোমার খুব ভালোবাসি সাগর।
--হুমম এখন অনেক হয়েছে।চলো আমায় খেতে দেবে।প্রচণ্ড ক্ষুধা লেগেছে।
--হুমম তুমি ফ্রেশ হয়ে আসো আমি খাবার দিচ্ছি।
--রুমি আজ রান্নাগুলো দারুন হয়েছে।তুমি রান্না করেছো???
--হুমম আমিই রান্না করেছি।তবে বিশেষ কিছু দিই যে প্রতিদিনের মতই আজও রান্না করেছি।এতে দারুন হওয়ার বিষয়টা বুঝলাম না।
--হুমম একটা কাজ করো আজ আমি খাবার খেয়ে নেই তুমি ঘরে কোনো শুকনো খাবার থাকলে সেটা খেয়ে নাও।
--আরো খাবারগুলো অসাধারন খেতে হয়েছে।তাই এর ভাগ কাউকে দিততে পারবো না। তোমাকেও না।
--কি এমন ভালো রান্না করেছি আমিও একটু খোয়ে দেখি।
--না না না রুমি না।
--ইশ এগুলো সব খাবারই তো ঝাল নুনে পোড়া।তুমি খাচ্ছ কি করে এসব!!!
--যেভাবে তুমি কষ্ট করে রান্না করেছো।
--তাই বলে এসব খাবার!!!প্লিজ আর খেয়ো না সাগর।আমি দুঃখিত আসলে আজ রান্নার সময় মনটা কেমন যেনো লাগছিলো।তাই ভুলো এসব হয় গেছে।
--আরে ধুরর বোকা,,,তাতে কি।এমন হয় কোনো কোনোদিন।
--সাগর......রররর।
--চলো তুমি কিছু খেয়ে নেবে।
--না আমি খাবো না।তোমায় এসব খাইয়ে আমার ভালো খাবার গলা দিয়ে নাববে না।আমি এভাবেই ঘুমাবো।
--না রুমি।শরীর খারাপ করবে।এমন করে না।একটু খেয়ে নাও।
--ঠিক আছে তাহলে একটুই কিন্তু।বেশি খাবো না।
--আচ্ছা ঠিক আছে একটুই খাও,,,তবে খাও।
--হুমম হয়েছে।
--হুমম গুড গার্ল।চলো এবার শুতে যাই।
--হুমম চলো।তবে একটা শর্ত আছে
--কি শর্ত বলো
--আমায় শক্ত করে জরিয়ে ধরে শুতে হবে।
--হাহাহা পাগলি।তোমার শর্ত রাখতে রাজি আমি।তুমি চাইলে জীবনও দিতে পারি তোমার জন্য।
--না জীবন চাই না।তোমাকে আকড়ে ধরে বাঁচতে চাই যতদিন আমি বেঁচে আছি।
--হুমম চলো।আমি তোমায় ঘুম পাড়িয়ে দেবো চলো।
--সত্যিই!!!
--হুমম সত্যিই সত্যিই সত্যিই।
--নাও এবার আমায় শক্ত করে জরিয়ে ধরো।
--হুমম ধরছি বাবা ধরছি।
--ধরো।আমায় ঘুম পাড়িয়ে দাও।
--এবার চোখ বন্ধ করো।আমি তোমায় জরিয়ে ধরেছি,,,এবার ঘুম এসে যাবে।
--হুমমমমমমম
--রুমি ঘুমিয়ে পড়েছো???
-------
--যাক ঘুমিয়ে পড়েছে।
ওকে নিয়ে আমার টেনশন দিন দিন বেড়েই চলেছে।পাগলিটার একটার সমস্যার কারণে ও মা হতে পারবে না।এতে আমার একটুও দুঃখ নেই।কারন ও আমার পাশে আছে।কিন্তু ও এই কথাটা কিছুতেই মেনে নিতে পারে নি।তাই এর বিকল্প ব্যবস্থার সন্ধান করছে প্রতিনিয়ত।তিন আগে ও জানতে পেরেছে ও মা হতে পারবে কিন্তু তার জন্য ওর নিজের জীবনটা বাজি রাখতে হবে ওকে।পাগলিটা তাতেও রাজি।ওকে নিয়ে আমার ভয় হয়।ও ওর বলা কথা রাখতে সব করতে পারে।কিন্তু আমি ওকে এখনো বোঝাতে পারছি না যে আমি ওকে চাই।আমাদের সন্তান চাই না যেখানে আমাকে রুমিকে হারাতে হয়।আমি ওকে ছাড়া থাকতে পারবো না।ওর যদি কিছু হয়ে যায়....আমি বাঁচবো না এই পাগলীটাকে ছাড়া।
রুমির বায়না,,,,,যা বলবে তাই করবে আর তা পুরণ না করলে ছোট বাচ্চাদের মতো করে করে।আর আমি ওকে কষ্ট দিয়ে থাকতে পারি না তাই ওর কিছু অন্যায় আবদারও পুরন করতে হয় আমাকে।
এবারো না চাওয়া সত্ত্বেও ওর এই অন্যায় আবদারটা আমাকে পুরন করতে হয়েছে।আজ আমার অনেক বড় অনেক বড় একটা সমস্যার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে।আমার রুমি মা হতে চলেছে।তবে এই খবরটায় আমার আনন্দের থেকে ভয় বেশি হচ্ছে আমি রুমিকে হারিয়ে ফেলবো না তো...!
আজ আমার পাগলীটা আমাদের সন্তানের জন্য একাই লড়ে যাচ্ছে।আজ আমি ওর পাশে নেই ও তো আমায় ছাড়া ভয় পায়।না জানি ওর এখন কেমন অবস্থা আমায় ছাড়া।আমার আজ সত্যিই খুব ভয় হচ্ছে আমার রুমি যাতে ঠিক থাকে এই আমার চাওয়া সৃষ্টিকর্তার কাছে।তারপর বাচ্চাটার কথা।অনেকক্ষণ পর ডাক্তার বেরোলো।ডাক্তারের মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে যে কিছু একটা হয়েছে।আমি জিজ্ঞেস করতেই ডাক্তার বললো রুমি আর নেই।আমি দৌঁড়ে গেলাম ওর কাছে।গিয়ে দেখি রুমির নিথর দেহটা একটা সাদা কাপড়ে ঢাকা।আমার আমার ছোট্ট রুমি ওর মায়ের পাশে শুয়ে হাতপা নাড়িয়ে নাড়িয়ে মনের আনন্দে খেলা করছে।ওকে দেখে আজ আমার খুব হিংসে হচ্ছে।
কিন্তু আমার কিছু নেই।ওতো নিষ্পাপ একটা শিশু।আমার আর রুমির সন্তান ওকে তো আর আমি দুরে সরিয়ে রাখতে পারবো না আমার থেকে।জন্মের পরই তো ওর মাকে হারিয়েছে এখন যদি আমি ওকে দুরে ঠেলে দিই তাহলে....না এটা ঠিক হবে না আর রুমিও রাগ করবে মন খারাপ করবে আমার ওপর অভিমান করবে।আর আমি তো ওকে কষ্ট দিতে পারবো না।রুমির শেষ কাজ সম্পুর্ণ করে নতুন একটা জীবন শুরু করেছি।যেখানে আমি,আমার ছোট্ট মেয়ে রিহা আর রুমার হাজার স্মৃতি ও স্বপ্ন আছে।এখন রিহার বয়স মাত্র তিন।ও একেবারে ওর মায়ের মতো।একটু কথাতেই বড্ড অভিমান করে ছোট তাতে কি।সব কিছু বুঝতে পারে।ওর দিকে তাকালেই আমার রুমির কথা মনে পড়ে।আমার রুমি আমার রিহার মধ্যে জিইয়ে আছে।রিহাকে আমি কখনোই কাছ ছাড়া করবো না।হারাতে দেবো না রুমির মতো।রুমি রিহাকে নিয়ে যত স্বপ্ন দেখেছিলো আমি সব স্বপ্ন পুরণ করবো রুমির খুশির জন্য।
রিহা'র মুখে বাবা ডাকটা ভারী মিষ্টি লাগে।রুমির দেওয়া এই উপহার আমি কখনোই ভুলতে পারবো না।আর ওর শাষণ,আবদার,বায়না,অভিমান আমায় মাথা পেতে নিতে হয় যেমনটা রুমির ক্ষেত্রে করতাম।রিহা আমার আর রুমির স্বপ্ন।ওকে আমি মনের মতো করে তৈরি করবো যাতে আমার রুমি খুব খুশি হয়।কোনো অভাব রাখবো।
তুমি রিহার জন্য দোয়া করো রুমি,,,।
**বাবা মার ভালোবাসা শ্রেষ্ঠ ভালবাসা।আর সন্তানের মায়া প্রকৃত মায়া।যা উভয় ব্যক্তি সকলকেই পরিপূর্ণ করে তোলে।
লিখেছেন
Post a Comment