দুঃখিনী মা - জ্যোতি


সেই ছোট বেলা থেকে দেখছি মা কেঁদেই যাচ্ছে।আর তার একমাত্র কারণ আমি।হ্যাঁ,আমি আমি হলাম আমার বাবা মায়ের একমাত্র মেয়ে।আমি তৃনা বড়লোক বাবা মায়ের মেয়ে।তবে আসলে ওটা কথার কথা আমার বাবা বড়লোক কিন্তু আমি আর আমার মা অত্যন্ত গরীব।
আজ তো আমি অনেকটা বড় হয়ে গেছি।তবে আমার জন্য আমার নির্দোষ মা'টা শুধু কষ্ট পাচ্ছে।আমি জন্ম নেওয়ার পর পরই বাবা মাকে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিয়েছে।কারন অামি মেয়ে জন্মেছি বলে।বাবা ছেলে সন্তান চেয়েছিলেন যে তার এই বিশাল সম্পত্তির দেখাশুনা করবে।কিন্তু তা আর হলো কই!আমি তো মেয়ে...।
তারপর আমাদের ঠাঁই হয়েছে ছোট্ট একটা বস্তিতে।যেখানে সকলে খুব ভালো।খুব সহজেই বস্তির সকলেই আমাদের মা মেয়েকে আপন করে নিয়েছে।আমি জন্মের পর থেকে অট্টালিকায় থাকি নি।বরং এমন জায়গায় আমি বড় হয়েছি যেখানে চালের ফুটো দিয়ে বৃষ্টি ঘরে পড়ে।যেখানে একমুঠো খাবারের জন্য রাতদিন ঘাম ঝরাতে হয় তারপর একমুঠো খাবার জোটে।
তার ওপর আবার পড়াশুনার কোনো ব্যবস্থা নেই।টাকা নেই যে!পড়বো কি যতই হোক সেটা বস্তির স্কুল।মা সারাদিন বাইরে কাজ করতো।আর আমি ছোট থেকেই বাসার প্রায় সকল কাজই করতাম যাতে মাকেকে বাইরে থেকে এসে আর কাজ করতে না হয়।মা কাজ করে যা পেত তাই দিয়েই কোনো রকম ভর্তি হয়েছি বস্তির স্কুলে।এভাবেই চলতে হয় অনেক কষ্টে।
এখন কলেজে পড়ি।বস্তির গণ্ডী পেরিয়ে আজ উন্নত স্থানে পৌঁছে গেছি।এখন আর মাকে বাইরে কাজ করতে দিই না এখন আমি রোজগার করি।পড়াশুনার ভালো অামি তাই নিজের যোগ্যতাটাকে সঠিক স্থানে কাজে লাগিয়েছি বিপদের সময়।কলেজ থেকে ফেরার পথে তিনটা টিউশনি করে বাড়ি ফিরি।এতে যে অর্থ পাই তা দিয়ে আমাদের দুজনের চলেও বেঁচে যায়।ছোট সংসার কম খরচ।আবার আমার পড়াশুনার জন্যও টাকার দরকার।তাই বাকি টাকা দিয়ে পড়াশুনার খরচ চালাই।
এভাবেই স্কুল,কলেজ পার করে ভার্সিটিতে এসে পড়েছি।সকলের মতো আমারও কিছু স্বপ্ন আছে,আশা আছে।আর আজ ভার্সিটিও শেষ।আজ আমি আমার স্বপ্ন পুরন করেছি।হ্যা আজ আমি এ্যাডভোকেট।আজ আমার বাবার থেকে আমার অনেক বেশি অর্থ।অনেক ধনী আজ আমি।আজ আমার বাবা ভিখারি।
আজ ওই নোংরা মনের মানুষটা তার উপযুক্ত শাস্তি পেয়েছে।আজ আমি খুব খুশি।আজ উনি আমার সামনে হাত পাতে।তবে খুশি আমি এটার জন্য না।আমি খুশি আজ আমার মাকে দেয়া কষ্টের উচিত ও যথাযথ শাস্তি পেয়ছেন উনি।আমরা তো কখনো ওনার সামনে হাত পাতি নি।আর আজ উনি একটা মেয়ের সামনে মাথা নত করছে এটা দেখে আজ নিজের মধ্যে একটা অজানা আনন্দ অনুভূত হচ্ছে।
একদিন উনি আমার মাকে অপমান করে তাড়িয়ে দিয়েছিল তার ছেলে সন্তান না হয়ে মেয়ে সন্তান হয়েছে বলে।আজ তার শাস্তি ভোগ করছেন ওই নোংরা মনের মানুষটা।তবে ওই লোকটাকে আমার মা এখনো বড্ড ভালোবাসে।মা ওনার কষ্ট দেখে আড়ালে চোখের জল ফেলে।আর আমায় দেখলেই স্বাভাবিক হওয়ার নাটক করে।মায়ের চোখের জল আমার চোখের আড়াল হয় নি।
তাই ওই লোকটাকে আমার এই বিশাল অট্টালিকায় এনে রেখেছি।যেমনটা উনি কখনো চোখেও দেখে নি।তবে হ্যা এটা সত্য আমি ওনাকে কোনো দয়া দেখিয়ে এখানে আনি নি এনেছি আমার মায়ের সুখের জন্য যিনি এতোদিন আমার সুখের জন্য নিজের সকল কষ্ট মুখ বুজে হাসিমুখে সহ্য করেছে।আর ওই নোংরা মনের মানুষটাকেই বা কি করে অস্বীকার করি উনি যে সম্পর্কে আমার বাবা হন।আর বড়দের সম্মান ও শ্রদ্ধা করা শিখিয়েছে আমার মা আমাকে।
আমার মায়ের খুশিতেই আমি খুশি।মা তো শুধু ওই লোকটাকে একটা জায়গা দিতে চেয়েছেন।মা বললে মায়ের জন্য জীবনও দিতে রাজি।কোনো প্রশ্ন না করে।আজ আমার যা তা সব আমার মায়ের।আমার মাকে আজ আমি সমাজে তার প্রাপ্য সম্মান দিয়েছি।নিজের সাধ্যমতো তাকে ভালো রাখার চেষ্টা করেই চলেছি।আর করেই যাবো যতদিন আমি বেঁচে আছি।মাকে কোনো কষ্ট পেতে দেবো না কোনোদিন।
মায়ের ডাকটা শুনলে মনটা ভরে যায়।যখন মা আমায় মামনি বলে ডাকে।শান্তি পাই আমি সবচেয়ে বেশি।যার কাছে আমার এতো সুখ তাকে কষ্ট দিই কি করে!!!সে যে আমার লাকি চ্যাম্প।
<সমাজটা বদলানো দরকার।মেয়ে সন্তানরা এটাও ফেলনা না।বংশের দীপ শুধু ছেলেরাই না মেয়েরাও হতে পারে।
যারা আজও মেয়েদের অবহেলা অবজ্ঞা করে তাদের ক্ষেত্রেই একটা বিশেষ গুণ লক্ষণীয়।সেটা হলো তারাই তাদের ছেলেদের জন্য মেয়ে খুঁজতে গেলে রুপবতী,গুণবতী,পরিমার্জিত,শিক্ষিত মেয়ে খোঁজে।
কেন খোঁজে.......??????
আর নিজেদের মেয়ে সন্তানের বেলায় কি শুধু মেয়েরা ফেলনা...!কি দোষ একটা ছোট্ট নিষ্পাপ মেয়ে শিশুর..!তার কি বাঁচার অধিকার নেই ছেলেদের মতো...?
মনোভাব বদলানো উচিত তাহলে পরিবার,সমাজ,দেশ সকল ক্ষেত্রেই মেয়েরা সম্মান পাবে যতটুকু তাদের পাওয়া উচিত।
একটা মেয়ের মাতৃত্বকে অসম্মান করার অধিকার কারো নেই।সৃষ্টিকর্তা এই অধিকার কাউকে দেন নি।
তাই তো নারী জাতিদের একটা বিশেষ সম্মান প্রদান করেছেন সৃষ্টিকর্তা।আর তা হলো"মা"....।
যার ঋণ অপরিশোধিত
তাই নারীদের সম্মানের পরিবর্তন দরকার।তাদের যতটুকুর প্রাপ্য তা দেয়া উচিত।নিজেদের মনোভাব বদলালে খুব একটা ক্ষতি হবে না।
আর মেয়ে সন্তান অবহেলিত নয়।তাদেরও মুল্য রয়েছে

লিখেছেন 

কোন মন্তব্য নেই