কালো বর


পৃথিবীতে আমার বরটা বোধহয় সবচাইতে কালো।আমার সব আপুদের বরদের থেকে আমার বরটা সবচেয়ে কালো।এটা নিয়ে সকলের বড় কষ্ট,দুঃখ,আফসোস।কিন্তু আমার কোনো কষ্ট নেই,দুঃখ নেই।সকলে বলে আমি এতো সুন্দর আর আমার কপালে কি না এমন একটা বর জুটলো...!কেন এমনটা হলো সকলের প্রশ্ন।
সকলের দুঃখ কষ্ট ভাবনাকে ছাপিয়ে আজ আমি ওকে নিয়ে পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মানুষ যা বলে বোঝানো সম্ভব না।আমার বরের নাম তুষার।আর আমি ওর চাঁদের আলো চাঁদনি। ও আমায় এতোটাই ভালোবাসে যা বলে প্রকাশ করা যায় না শুধু মন দিয়ে অনুভব করা যায়।আমি দেখতে সুন্দর আর ও দেখতে কালো বলে আমায় নিয়ে ওর গর্বের শেষ নেই।ও ওর বন্ধুদের গর্ব করে বলে আমি কালো তো কি হয়েছে আমার বউ হীরের টুকরো,চাঁদের মিষ্টি আলো।
আমি এসব প্রশংসা মোটেও চাই না।কেউ কালো তাতে কি...!মানুষের মনটা কতটা সাদা বা কালো তা দেখতে হয় বাহ্যিক রুপে কি যায় আসে।যৌবনে সকলেরই সৌন্দর্য অটুট থাকে।কিন্তু একটু বয়স বাড়ার সাথে সাথে শরীরের চামড়া ঝুলে যায় এতে ভালোবাসা লীন হয় না যদি সেটা সত্যিই ভালোবাসা হয়।এতে মনের ভেতরের ভালোবাসা নষ্ট হয় না।
আর আমি তুষারকে নিজের থেকেও বেশি ভালোবাসি।ওর সাথে কারোর তুলনা হয় না ও ওর মতোই আলাদা রকমের সুন্দর।ওর মনটা বেশ বড় আর পরিষ্কার।সকলকে ভালোবাসতে জানে ও।মুহুর্তের মধ্যেই সকলকে আপন করে নিতে পারে।ওর এই গুণগুলো আমার নজর কাড়ে।ওকে ভালোবাসতে আমার মন আরো উৎসুক হয় ওঠে।ওকে হারাতে দিতে চায় না মন ভয় হয়।
তবে শুধুই ও না ওর পরিবারের লোকেরাও অনেক ভালো।আমাকে সকলে খুব আদর করে বড় বউ বলে কথা।আমার একটা ছোট্ট দেবর আছে।ওর নাম তিহান।ও একেবারে আমার ভাইয়ের মতো।আমরা সারাদিন অনেক মজা করি।ছোটদের মতো বিভিন্ন খেলা করি।তুষার মাঝেমাঝেই হেঁসে ফেলে আমার খেলা দেখে আমারও তখন ভীষণ লজ্জা করে।
এতো কথা শোনার পর সকলে নিশ্চয়ই ভাববেন আমরা প্রেম করে বিয়ে করেছি।কিন্তু না মোটেও নয়।আমাদের বিয়ে আমাদের বাবামায়ের ইচ্ছেতেই হয়েছে।তাদের সকলের পছন্দেই হয়েছে আমাদের বিয়েটা।বিয়ের পর আমরা প্রেম করছি এখন।
->চাঁদনি,,,কোথায় তুমি??(তুষার)
->আমি রান্নাঘরে।কেন?(চাঁদনি)
->একটু শোনো না।
->খুব জরুরি দরকার...?
->হুমম খুব জরুরি।তারাতারি এসো চাঁদনি আমার মিটিং আছে।
->আসছি...হুমম বলো
->আমার রেড শার্টটা কোথায়???
->তোমার রেড শার্ট...!আজ না তোমার মিটিং তুমি রেড শার্ট পড়বে কেন হোয়াইট শার্ট না পড়ে।
->না আজ রেড শার্টটাই পড়বো।
->হোয়াইট তোমার পছন্দের রঙ....তাহলে...?
->আরে আর বলো না
->কেন কি হয়েছে...?
->কিছু না
->কিছু তো একটা হয়েছে বলো আমায়
->কই কিছু হয় নি তো।
->তোমার না হোয়াইট শার্টটা পছন্দের তো তুমি ওটা পড়ছো না কেন???
->চাঁদনি একটা কাজ করবে...?
->বলো,পারলে অবশ্যই করবো।
->আরে এতটাও কঠিন কাজ না।তুমি পারবে।
->আরে কি কাজ সেটা তো বলো আগে
->আমার হোয়াইট শার্ট গুলো সব তিহানকে দিয়ে দিও।ওকে বেশ মানাবে তাই না।ও তো দেখতেও সুন্দর আর বেশ ফর্সা।
->তা মানাবে ওকে।কিন্তু হঠাৎ করে এইকথা বলার মানে না ঠিক বুঝলাম না।তোমার প্রিয় রঙের শার্ট গুলো আমি ওকে কেন দেবো...?
->আরে এমনি।
->না এমনি না কি হয়েছে বলো আমায়।
->উফফফ,,,এতো জেরা আমার লাগে না।তোমার প্রত্যেকটা প্রশ্নের উত্তর দিতে আমি বাধ্য নই।(হাত তুলে)
->তুষার.....রররর!!!
->আর এতটাও কথা বলবে না তুমি।
->তুমি আমার ওপর হাত তুললে এমন তো কখনো করনি তুমি তবে আজ....!
->আগে না করলে যে এখনও করা যাবে না এমন কোনো কথা নেই চাঁদনি।
->তুমি আমায় এমন করে বলতে পারলে....!
->হুমমম পারলাম দরকার হলে আরো বলবো।
->থাক আর দরকার পড়বে না তোমার আমাকে এসব কথা বলার।আমি আজই তোমাকে ছেড়ে তোমার এই সংসার ছেড়ে চলে যাবো আমার বাপের বাড়ি।
->সে তোমার যেখানে খুশি যাও যা খুশি করো।তবে বাপের বাড়ি গেলে আর ফিরবে না তুমি।ওখানেই থেকে যাবে।
->তুষার!
->হুমম ঠিকই বলছি।আর ফিরে এসো না কখনো।
->ঠিক আছে আর ফিরবো না।
তুষার চলে গেলো।ও আমায় এত্তোগুলো কথা বলতে পারলো।ও আমায় চলে যেতে বললো এটা আমি ভাবতেও পারছি না।আমাদের বিয়ের দু বছর হতে চলল এই পর্যন্ত এমন কোনোদিনও হয়নি আজ যা হলো।মনটা আমার আজ ভেঙে যাচ্ছে একটা অচেনা ব্যথায়।প্রকাশ করতে পারছি না সেই ব্যথা।নিজেকে আজ বড় অসহায় মনে হচ্ছে। আজকে এতোকিছুর পর আমার আর এখানে থাকা চলে না এতে তুষারকে ছোট করা হবে।আর আমি ওকে ছোট করতে পারবো না।আর তাছাড়া তুষার তো পরিষ্কার করে বলেই দিলো চলে যেতে আর না ফিরতে।ওর কথা ফেলি কি করে!
চলে যাবো করেও যেতে পারছি না।একটা অদ্ভুত টান করছে মনের ভেতর।কি করবো বুঝতে না পেরে ছাদে এসে বসে আছি.......

কোন মন্তব্য নেই