বারিধারা - জ্যোতি
জন্মের পর না কাঁদা নাকি ভালো না।এতে বাচ্চার ক্ষতি হয়।কিন্তু আমি..! আমার ভাগ্যটা এমনই যে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত বোধহয় আমাকে শুধু কাঁদতেই হবে।আর পারছি না।এবার হয়তো মরেই যাবো।ঠিক এভাবেই বলছিলো মেয়েটা ওইদিন আমাকে।মেয়েটার পরিচয়টা ঠিকমতো নেয়া হয়নি।মেয়েটার মুখটা খুব মায়াবী।আর ওর কান্না আমাকে ওর প্রতি দুর্বল করে দিচ্ছিল।আজ আবার সেদিনের মতো হঠাৎই ওর সাথে একই জায়গায় দেখা।ওর জন্য প্রতিদিন আমি অপেক্ষা করি কিন্তু ওর দেখা পাই নি একদিন।আজ হঠাৎ করেই দেখা হয়ে গেছে।কি যে আনন্দ হচ্ছে আমার সেটা বলে বোঝাতে পারবো না আমি।মেয়েটাকে না চিনি না জানি তবু এতো মায়া কোথা থেকে আসছে জানি না।আচ্ছা মেয়েটারও আমার জন্য ঠিক আমার মতোই অদ্ভুত অনুভূতি হয়..!মেয়েটা আজ এখনো আমায় দেখে নি।যাই ওর সাথে কথা বলে ওর বিষয়ে সব জানার চেষ্টা করি।
--এই যে হ্যালো....
--কে...?
--আমি।চিনতে পেরেছেন আমায়?
--আপনাকে চিনতে পারবো না..!এটা হয়।
--হুমম সেটাই।তো আপনার সমস্যা কিছু কমেছে কি?
--না সেটা বোধহয় আর সম্ভব না।
--কেন...!উফফ আজও ভুলে গেছি...।
--কি???
--আপনার নামটা যদি বলেন...?
--আমার নাম স্পর্শীয়া
--অনেক সুন্দর নামটা।
--ধন্যবাদ।আপনার নামটা???
--আমি শুদ্ধ।এবার আপনার সমস্যা যদি আমায় বলেন!
--কি করবেন শুনে???
--যদি সাহায্য করতে পারি
--পারবেন না হয়তো
--কেন??আপনি বলেই দেখুন না একবার।
--এখানে এভাবে সব কথা বলা যাবে না।
--তো কোথায় বলবেন বলুন সেখানেই যাবো আমি।
--সামনে একটা পার্ক আছে চলুন ওখানে বসে সব কথা বলবো।
--ঠিক আছে তবে চলুন।
--আচ্ছা একটা প্রশ্ন করি?
--হুমম বলুন
--আপনি একটা অজানা অচেনা মেয়েকে সাহায্য করতে চাইছেন কেন?
--সত্যি বলতে এর কারন আমিও জানি না।
--হিহিহি ভালো।হুমম চলুন
--বসুন।।
--হুমম আপনিও বসুন।
--এবার বলুন,,,
-আমি বিত্তশালী পরিবারের মেয়ে না।সাধারণ একটা ঘরের মেয়ে।যেখানে অর্থ নেই কিন্তু অনেক ভালোবাসা আছে।কিন্তু দারিদ্র্যতার কারণে আজ আমি এখানে সব খারাপ লোকেদের মাঝে।(স্পর্শীয়া)
-হুমম সব ভালো থাকতে থাকতে হঠাৎ এমন হলো কেন?(শুদ্ধ)
-সবই আমার কপাল...!
-এটা কেমন কথা...!
-এমনই।
-সব কথা পরিষ্কার করে বলুন যাতে আমার বুঝতে সুবিধা হয়।
-আসলে আমি আমার বাসা থেকে এসে এখানে আমার এক আত্মীয়ের বাসায় থেকে পড়াশুনা করছিলাম।
-করছিলেন মানে....!
-হ্যা করছিলাম।কিন্তু আমার পড়ার মাঝপথেই ওরা আমার পড়াশুনা বন্ধ করে দেয়।আমায় দিয়ে বাসার সব কাজ করায়।(কেঁদে কেঁদে)
-আরে আবার কাঁদছেন কেন?দয়া করে কাঁদবেন না।আপনাকে কাঁদতে দেখলে আমার খুব কষ্ট হয়।
-চোখ মুছতে মুছতে...আপনার কষ্ট হয় কেন...?
-তা জানি না।আপনি না কেঁদে পরের ঘটনা বলুন।
-পরের ঘটনা আর বেশিদুর নয়।
-যতটুকু আছে সেটাই বলুন
-আমার বাবা তার অল্প রোজগারের যে টাকা পাঠায় সেটাও ওরা নিয়ে নেয় আর আমার বাসায় বলে আমি খুব ভালো পড়াশুনা করছি।
-বলেন কি....!
-হুমম ঠিকই বলছি।আমার পড়াশুনার সব টাকা ওরা নিয়ে নেয়।আমাকে বাসাও যেতে দেয় না।কতদিন বাবামাকে দেখিনি।
-এবার দেখবেন
-কিভাবে...?
-আমি আপনাকে ওই বাসা থেকে স্বসম্মানে নিয়ে আসবো।
-কিন্তু কি করে...!
-আপনি ভাববেন না।আর বেশি নয় আর মাত্র দুই থেকে তিন দিন অপেক্ষা করুন আপনি।
-কিন্তু কি করবেন...?
-দেখুন আমি একটা চাকরি করি।একা মানুষ যা বেতন পাই তা দিয়ে দুজনের হয়ে যাবে।
-মানে???
-কিছু না।
-আপনার বাবামা নেই?
-ছিলো এখন হারিয়ে গেছে।
-সরি(কেঁদে কেঁদে)
-আরে আবার কেন কাঁদছেনন?
-আপনার কথা শুনে।
-আপনার কষ্টের কাছে আমার কষ্ট তো কিছুই না।একটা কথা বলি???
-বলুন....
-এই একা মানুষটার সাথে বাকি জীবন কাটাবেন?
-আপনি কি আমায়....
-জ্বী,,, আপনি যা ভাবছেন তাই।
-আমাকে তো চেনেননই না আপনি।আর আমি আপনাকে চিনি না।বিয়ে বাঁধা পরার পর দুজন অচেনা ব্যক্তি পরস্পরের চেনা হয়।আমাদেরও না হয় তাই হবে।
-কিন্তু আমার বাসার লোকজন...
-ওটা নিয়ে আপনাকে ভাবতে হবে না।আপনি শুধু আপনার বাসার ঠিকানাটা দিন তাহলেই হবে।
-আচ্ছা ঠিক আছে।
-আমি আপনাকে বিয়ে চাই এটা নিশ্চয়ই আপনি বুঝেছেন...?
-হুমমম তাই তো বললেন আপনি
-আপনি বিয়ের পর আপনি পড়াশুনা করবেন।তারপর নিজের নতুন পরিচয় তৈরি করবেন।
-আচ্ছা একটা বুঝতে পারছি না আমি।
-কি?
-আপনি আমার এতো বড় সাহায্য করছেন কেন???
-হয়তো আমি আপনাকে ভালোবাসি।
-সত্যিই কি তাই...!
-সত্যিই তাই।
-আপনার আর আমার একটা নতুন জীবন শুরু মাত্র কয়েকদিন পর থেকে।।।
-তাহলে কি এখনো আপনি বলবেন???
-না তুমি বলবো।
-বলুন তাহলে।
-আমি তোমায় ভালোবাসি স্পর্শীয়া সেই দিন থেকেই।শুধু বুঝতে পারি না।
-আমিও তোমায় ভালবাসবো।
-মানে?
-হিহিহি,,,,,বিয়ের পর।
-তুমি তো দুষ্টুমিও পার দেখছি
-হুমম পারি.....
পাশে থেকো সবসময়।কখনো ছেড়ে যেও না।ভালোবাসবো তোমায় সারাজীবন।
আবার কাঁদে.....
এটা কাউকে কাছে পাওয়ার পর খুশির কান্না।।।
সত্যিই........!
হাজার সত্যিই....।
লিখেছেন
Post a Comment