অভিমান - Hridom




মাগরীবের নামাজ পড়ে একটি গছের
শিকড়ে অদ্ভূত
অঙ্গভঙ্গিতে বসে আছে তৈয়ব, এখন
সে নিয়মিতো নামাজ
পড়তে চেষ্টা করে| সে আজ
খালি হাতে বসে আছে, তার
হাতে আজ মোবাইল নেই সিগারেট
ও নেই বুকের ভেতরের
শুন্যতা হাতকে ছুঁয়ে গেলো তাই
হাতটা ও খালি|
হটাত করে পাশ দিয়ে রাজু কোথায়
যেনো যাচ্ছে তৈয়বকে দেখে বলছে কিরে আজ
তো ক্রিকেটে সেন্সুরী মারচোস
পাটি দিবি নাকি? তৈয়ব নিশ্চুপ!
তারপর রাজু নিজেই বললো,
অনেকদিন
হচ্ছে টাকা দিয়া পাটিতে আসিসনা কেনো কাল
পাটি আছে আসিস কিন্তু, তৈয়ব ২০০
টাকা বের করে দিয়ে বললো এই
নে পাটির টাকা রাজু
টাকাটা নিয়া চলে গেলো| এখন
তৈয়বের কাছে টাকা থাকে তৈয়ব
খুব ফালতু হয়ে গেছে বিরধীদলের
যে কোন কর্মসুচিতে অংশ নেয়
এবং একটা চোটখাটো পদ ও
পেয়েছে রাজনৈতিক সংঘঠনের|
এতে মানুষ তাকে খারাপ জানলেও
তাতে কি? নিজের চলাফেরা আর
হাত
খরচাটাতো চলে ওদেরকে পাটির
টাকাটা না দিলে সমস্যা হতো তাই
দিয়া দিলো, পাটিটা এক কথায়
নেশার আসর|
বাসায় যেতে ইচ্ছে হয়না তার,
কেননা বাসায় গেলেই অসুস্থ
বোনের পাগলামো দেখতে হবে,
তার সাথে বেকারত্বের
অভিশাপে মায়ের
বকুনিতো বাধ্যতামূলক! আম্মু
দিনে ২ বেলা খাইয়ে ৪
বেলা বকা দেয়, বকা না দেওয়ার
কোন কারন নেই কেননা, অতি নিন্ম
মধ্যবিত্ত পরিবারের অসুস্থ
বাবা মায়ের একমাত্র ছেলে আর ৪
বোনের একমাত্র
ডিপ্লোমা ইন্জিয়ার ভাইয়ের
বেকার থাকাটা পরিবারের
জন্যে অভিশাপ স্বরুপ|
তাই শীকড় টাতে বসে আছে তৈয়ব
আর ভাবছে এখানে বসে মনের
সাথে কতনা কথা হতো কতনা পাগলামো কতনা অভিমান
আর কতনা ভালোবাসায়
ঘেরা ছিলো সে দিনগুলো| কিন্তু
আজ আর সে নেই তাই মোবাইল
টা হাতে না থাকলেও সমস্যা নেই
কেননা, কেউকে ফোন করবার
তাড়া নেই এখন কেউ রিংটোন
শুনবে এই ভয়ে মোবাইলটা সাইলেন্ট
করে রাখা লাগেনা তাই
মোবালটা ঘরে রেখে এসেছে সাইলেন্ট
না করেই, দরকারি ফোন আসলে ও
আসতে পারে হয়তোবা কোন
কম্পানী থেকে চাকুরীর ইন্টারভিউ
এর খবর জানাবে, তা জানা টাও খুব
দরকার মনে হয়না চাকুরীটা হলেও
কি? এর বেতন দিয়া তৈয়ব তো আর
অতি নিন্ম মধ্যবিত্ত
থেকে মধ্যবিত্ত অথবা উচ্চবিত্ত
হয়ে মনের যোগ্য হতে পারবেনা,
মনকে পাবার শিক্ষাগত বিত্তগত
কিংবা আচরনগত কোন যোগ্যতাই
যে তার নেই| এসব ভাবতে ভাবতেই
তৈয়বের চোখের কোনে কান্নাহীন
জলের ফোঁটা জমে গেছে,
এখন সিগারেট
টানলে হয়তো সিগারেটের রংগিন
ধোঁয়ায় নিজের
কষ্টটাকে কিছুটা হলেও
উড়িয়ে দেওয়া যেতো! কিন্তু এই মদ
গান্জার নেশা যে তৈয়ব
কে মাতাল করে এবং তার সংকীর্ন
মানুষিকতার সাথে যুক্ত
করেছে নোংড়া আচরন, তার পর
থেকেইতো তৈয়ব আজ সবার
কাছে বিরক্তির আর ঘৃনার পাত্র|
যদিও তৈয়বের এসব
নোংড়ামতো সবছেয়ে অপমানিত
হয়েছে সে নিজেই, তারপর
সবছেয়ে নিকৃষ্ট ভাষার তার মন আর
শ্রষ্টাকে আঘাত করে প্রমান
করেছে একটা মানুষ
কতোটা নিছে নামতে পারে|
তাছাড়া আরো কিছু কারনে কোন
এক দিন তৈয়ব সিদ্ধান্ত
নিয়েছে নেশাতো দূরের কথা আর
সিগারেট ও টানবেনা এবং তার
মনের নিষেধ করা কাজ
না করতে সর্বোচ্চো চেষ্ঠা করবে!
তাই আজ হাতে সিগারেট নেই
আছে শুধু বুকের সাথে হাতের গভীর
যোগসূত্র আর তা হলো শুন্যতা|
তবুও তৈয়ব সব দেখে আজ সব কিছু
বুজতে শিখেছে, ব্যাক্তিত্বহীন
তৈয়ব আজ কিছুটা হলেও ব্যাক্তিত্ব
পেয়েছে, যদিও তৈয়ব আজো তার
মনের কাছে ব্যাক্তিত্বহীন
নির্লজ্জ হয়ে বারে বারে পরাজয়
মেনে নিয়ে অপরাধ স্বীকার
করে আত্মসমর্পন করে বলে,
আমাকে ক্ষমা করো তোমাকে ছাড়া থাকতে আমার
খুব কষ্ট হচ্ছে মন
আমাকে তুমি ফিরিয়ে নাও মন
আমি যে আর পারিনা মন|
শীকড় টাতে এখনও বসে আছে তৈয়ব
আর খুব ইচ্ছে করছে মনকে বাসায়
গিয়ে একটা ফোন দিয়ে বলতে মন
আমি গতবছর পারিনি কিন্তু এবার
পেরেছি ক্রিকেটে সেন্সুরী করতে,
কিন্তু মন যে তার ফোন
দরবেনা কারন তৈয়ব
যে ব্যাক্তিত্বহীন নোংড়া আর
অযোগ্য|মেসেজ
করে জানাতে পারতো কিন্তু
যে তৈয়ব প্রত্যেকটা ক্রিকেট ম্যাচ
শেষে ম্যাচের বিবরনী তার
মনকে জানাতো সে আজ
সেন্সুরী করার পর জানানোর সুযোগ
থাকা সত্ত্বেও জানায়নি,
একটা ভয়ে হয়তো মন এখানেও
রিলেশন ব্রেক আপ করার পজেটিভ
দিক খুঁজে নিয়ে ভাববে সম্পর্ক শেষ
হওয়াতে ভালোই হয়েছে, সম্পর্ক
থাকা কালে তৈয়ব
যা পারেনি আজ সেটাই পারছে|
তারপর এশার আযান দিচ্ছে আযান
শেষে গাছ থেকে একটা শুষ্ক
পাতা ঝরে পড়লো, তৈয়ব
ভাবতে লাগলো গাছের
কাছে পাতাটা যোগ্যতা হারিয়েছে তাইতো গাছটি পাতাটিকে ফেলে দিলো,
তারপর
একটা কথা মনে পড়লো নির্বাচনী প্রচারনায়
আমাদের দলীয় পোলাপান কিছুদিন
আগে মিছিল করলো, যোগ্য
প্রার্থী দিলদার ভাই চেয়ারম্যান
পদে তাকে চাই, তখনই তৈয়বের
দৃষ্টি বাস্তবতায় পড়লো আর
নিজেকে বোঝাতে লাগলো,
আমি কিভাবে মনকে পাবার
আশা করি আমিতো মনকে পাবার
প্রার্থী হবারো যোগ্য নই! অতঃপর
তৈয়ব ভাবতে থাকে হয়তো এসব
জন্ত্রনার অবসান হবে নিজের
সন্মান আর
ব্যক্তিত্বকে ফিরে পাবে সে কেননা একটা চাকুরী হতে পারে অতি শীঘ্রই,
চাকুরী জীবন নানাবিধ ব্যাস্ততার
কারনে তৈয়বের জীবন
নিয়ন্ত্রনে চলে আসবে, পরিবারের
কাছে ফিরে পাবে তার
যথাযোগ্যস্থান আর
ভলো রাখতে পারবে পরিবার আর
তার আশেপাশের মানুষগুলোকে,
সবার আনন্দ দেখে চরম
প্রশান্তিতে তৈয়বের
চোখে ফুটে উঠবে প্রকৃত হাসি|
কিন্তু সময়ের
প্রয়োজনে যে চলে গেছে সে কি আসবে ভালোবাসবে?
তৈয়ব আরো ভাবে বাস্তবতায়
তো দেখি কেউ যায় কেউ
আসে এইতো সেদিন রিকু
আরেকটা গার্লফ্রেন্ড
পাল্টালো আর মনকে প্রপোস
করা সাইফের ফেসবুক আইডির ওয়াল
আর পটো গুরে দেখলো সে এখন
আরেকজনের সাথে সম্পর্ক
করছে তখন মনে হয় এটাই বোধহয়
বাস্তবতা এটাই বোধহয় আধুনীকতা!
তৈয়ব এসব ভেবে একটু
মুচকি হাসে যদিও হাসিটার
মানে তৈয়ব ছাড়া আর কেউ
বুঝেনা বুঝবেওনা|এখন আর
সে নেশার রঙ্গিন ধোঁয়ায় কষ্ট
না উড়িয়ে শান্তির পরশে কষ্ট দূর
করতে চায়, তৈয়ব এখন একটাই স্বপ্ন
দেখে আর তা হলো যেভাবে সম্ভব
আশপাশের মানুষ
গুলোকে সুখী করা আর তার মন
ফিরুক আর নাইবা ফিরুক
তাকে আকড়ে ধরেই বেঁচে থাকা,
যদিও
এটা বাস্তবতা বিরুধী তবে একটা কথা মানতে হবে মানুষ
যা করে সেটাই বাস্তবতা আর
তৈয়ব নিজের স্বপ্নকে বাস্তবতায়
পরিনত করবেই তার কারন একটাই
সে তৈয়ব, এবং সে তৈয়ব বলেই
এটা সম্ভব| তারপর তৈয়ব শীকড়ের
মায়া ছেড়ে এশার নামাজ
পড়তে মসজিদে রওনা দিলো

কোন মন্তব্য নেই