ফেসবুক প্রেম - Hridom

                       

অত : পর অপেক্ষা
সমাজের এক সুনামধন্য পরিবারে বড়
হয়ে ওঠা ছেলে তুহিন। ও
ছিলো কলকাতার
অভিনেতা দেবের পাক্কা ভক্ত। বন্ধুদের
প্রায় ই
বলত দেব
নাকি তাকে শিখিয়েছে ভালবাসা কি?
এই
সুবাদে দেব ফেন দের কাছে অনেকটাই
জনপ্রিয়
হয়ে উঠলো তুহিন। একদিন একটা ফ্রেন্ড
রিকুয়েস্ট
আসল। নাম "মোহনা ইসলাম". দেখেই
চমকে উঠলো তুহিন। এ
তো দেখি বাংলাদেশি মেয়ে রে বাবা!!
প্রোফাইল
চেক করে দেখল মেয়েটাও দেব এর ভীষন
বড়ও ফেন।
মেয়েটা তার থেকে ২ বছরের ছোটো।
মেয়েটাই আগ
বাড়িয়ে মেসেজ দিল।
মোহনা : কেমন আছেন?
তুহিন : এই চলছে। তুমি?
মোহনা : ভালো আছি। কোথায়
থাকা হয়?
তুহিন : সিলেট। তুমি?
মোহনা : আমি যশোর। দেবের কোন
মুভি টা সবচেয়ে বেশি ভাল লাগে?
তুহিন : প্রেমের কাহিনী।
মোহনা : খুব রোমান্টিক মনে হচ্ছে।
তুহিন : কিছুটা তো বটেই।
এভাবেই তারা হয়ে ওঠে ভাল বন্ধু।
সম্পর্ক
হতে থাকে ঘনিষ্ট থেকে ঘনিষ্ঠতর
তুহিন কেন জানি মোহনার প্রতি টান
অনুভব
করতে লাগলো।
তুহিন : আচ্ছা মোহনা একটা কথা বলব?
মোহনা : অবশ্যই।
তুহিন : তুমি আমার কোয়েল হবে?
মোহনা : এতদিন লাগলো এই কথা বলতে?
তুহিন : অহম
মোহনা : গাধা একটা
এরপর প্রত্যেক দিন কথা হত তাদের।
একদিন তুহিন
ফোন নম্বর চাইলে মোহনা নিজ থেকেই
কল করল।
এভাবে চলতে থাকল তাদের মিষ্টি প্রেম
মোহনাকে ছাড়া একদম
থাকতে পারতো না তুহিন।
পরিবারের চাপের মধ্যেও তাকে কল দিত
মোহনা।
কখনো নিজেরটা দিয়া,কখনো বাবা -
মায়েরটা দিয়া। অবশ্য বাবা - মায়ের
ফোনে কল
দিতে তুহিনের অপর
নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল
মোহনা।
৩ মাস পর।
মোহনা যেন কেমন পাল্টে গেছে। আগের
মতো কথা বলেনা। আগের সেই
মায়াবী হাসি আর
দুষ্টুমি নাই। তুহিনের প্রতি কড়া শাসন
টা ও
কমতে শুরু করেছে। প্রত্যেক বিকেলের
মতো আজও
তুহিনের ফোনে কল আসলো মোহনার।
আগ্রহের
সাথে ফোন তুলল তুহিন।
রোগা রোগা গলায় বলল,
মোহনা : তুহিন আমার গলার টিউমারের
সমস্যা বেড়ে গেছে। এজন্য
গলা অপারেশন
করতে ঢাকা নিয়া যাবে আব্বু। তাই
আগামী ১৫ দিন
কোনো কথা হবেনা বুঝলে। আমার জন্য
দুআ করো আর
ভালো থেকো, বাই।
এক নিশ্বাসে কথাগুলো বলে ফোন
কেটে দিল মোহনা।
অনেক চেষ্টা করেও আর ফোন
গেলনা মোহনার ফোনে।
এই কয়দিন মোহনার জন্য আল্লাহর
কাছে চোখের
জলে প্রার্থনা করলো তুহিন।
১৭ দিন পর।
ফোন আসলো মোহনার নম্বর থেকে।
তুহিন : মোহনা কেমন আছো তুমি?
কতটা মিস
করছিলাম জানো তুমি? কেমন
আছো বলো তাড়াতাড়ি।
মোহনা : অনেক ভালো। তুমি কেমন
আছো?
তুহিন : কে আপনি?
মোহনা : অ্যাই ১৭ দিনেই ভুলে গেলে?
আমি মোহনা।
তুহিন : সেটা তো জানি। কিন্তু তোমার
কণ্ঠ এরকম
লাগছে কেন?
মোহনা : আমার গলার ভয়েস
পালটে গেছে অপারেশন
হওয়ায়।
সব সরল মনে বিশ্বাস করে নিলো তুহিন
আবার চলতে থাকল তাদের
চিরচেনা ভালবাসা।
তুহিন আজ অনেক খুশি। তার
মোহনা তাকে সবার
আগে টিক ১২ টাতে জন্মদিনের
শুভেচছা জানিয়েছে।
কিন্তু এর টিক ৫ দিন পরেই ঘটল তুহিনের
জীবনের
সবচেয়ে বেদনাদায়ক ঘটনা। যেন আকাশ
ভেঙ্গে পড়েছে তুহিনের ছোট্ট মাথায়।
হ্যাঁ এই মোহনা আগের মোহনা ছিলনা।
এই মেয়ের
নাম তৃশা। তুহিনের সাথে সময়
কাটানোর জন্য
তৃশা কে সিম দিয়ে দিয়েছিল মোহনা।
আর
টিউমারের ঐ ঘটনা ছিল সাজানো নাটক
মাত্র।
তুহিনের কাছে মোহনা আর নিজের
ভুলের জন্য মাফ
চাইল তৃশা। তুহিন কোনো উত্তর দিলনা।
নিজের
অজান্তেই চোখের
কোনে লুকিয়ে থাকা জলটুকু
মুছে নিল। আর লাল বাটনে ক্লিক
দিয়ে কেটে দিল
ফোনটা।
আজ চোখের জল টা ও শুকিয়ে গেছে।
তুহিন
জানেনা তার নিষ্পাপ ভালবাসার
সাথে কেন এমন
বেইমানি করল মোহনা।
আজ তার মনের মধ্যে শুধু একটাই নাম
মোহনা আর
মোহনা। সেই নিজ্রন কান্নার আওয়াজ
শব্দোত্তর
তরঙ্গের
মত আছড়ে পড়ে চারদিকে।
এ যেন
হারিয়ে যাওয়া প্রেমকে ফিরে পাওয়ার
আকুতি। এ যেন ভালবাসার কষ্টের
মিছিল।
তুহিন এখনও বিশ্বাস করে তার
মোহনা ফিরে আসবে।
না আসলে মোহনার জায়গায় অন্য কেউ
বসবে। সেই
রাজকন্যার অপেক্ষায় আছে তুহিন।
সে জানে সেই রাজকন্যা আসবে তার
জীবনে। সেই
ভালবাসায় থাকবেনা কলঙ্কের
কোনো ছাপ।

কোন মন্তব্য নেই