ইচ্ছে করে ভুলে যাই - Hridom

-কেমন আছো শ্রভ্র?
-আমাকে বলছেন?-হুম। কেমন আছো?
-ও ও , তুমি!!! ভাল।
-জানতে চাইবা না আমি কেমন
আছি?
-কেমন আছো?
-
আসলে কি বলবো,আমাকে অনেকটাই
ভুলে গেছো।
-হুম। এখন আমি সব কিছু
ইচ্ছে করে ভুলে যাই।
আসলে ভুলে যাওয়াই ভাল।
আশাটা যখন নিরাশা হয়ে যায়,তখন
মানুষ একটু অন্য মনস্ক হয়ে যায় ,
ত্রিভুবনে কি হচ্ছে, তা খেয়াল
থাকে না। হয়তো বা আমার সেরকম
কিছু হয়েছে।
আমার বন্ধু মহিউদ্দিন
বলতো,"মানুষকে কখনো পুরোপরি আপন
করতে নেই, আমার মানুষের কাছ
থেকে কিছু
আশা করতে নেই,নতুবা অনেক কষ্ট
পাওয়া যায়।" তার কথা আমি তখন
বিশ্বাস করিনি,আজ তাই সত্যি হল।
-ওও তাই, শ্রভ্র। তোমার
কাছে আমি ক্ষমা চাবো না, কারন
আমি সেই যোগ্যতা হারিয়েছি।
-আজ পর্যন্ত যারা আমাকে কষ্ট
দিয়েছে অথবা আমার সাথে খারাপ
ব্যবহার করেছে, তাদের
আমি ক্ষমা করে দিয়েছি। তাই
তুমি ক্ষমা নিয়ে চিন্তা করো না।
ক্ষমার জন্যে এতদূর না আসলেও
পারতে।
-না, আমি ক্ষমার জন্যে আসিনি।
শুধু দেখতে এসেছি তুমি কেমন
সুখে আছো? বউ-বাচ্চা নিয়ে অনেক
সুখে আছো বুঝি? তোমার
বাবুটা দেখতে অনেক সুন্দর বুঝি?
-সুখ!!! অনেক সুখে আছি। আর বিয়ে!
এই জগতে সবাই চাইলে ও স্বার্থপর
হতে পারে না।
আচ্ছা নীলা তোমাকে একটা প্রশ্ন
করবো? আমাকে কেন ভালবাসলে।
আমিতো তোমাকে ভালবাসতে বলিনি।
তোমিই তো আমাকে প্রথম
ভালবাসতে বলেছিলে। তবে কেন
তুমি আমার সাথে এরকম করলে?
তুমি না বলেছিলে,ভালবাসা
কেন এটাকে কলঙ্কিত করলে?
আমাকে অনেক ভালবাসতে বুঝি?
আসলে আমি অনেক স্বার্থপর।
মেয়েরা অনেক স্বার্থপরই হয়।
অামি পারিনি সেদিন আমার
বাবাকে মৃত্যুর মুখে ফেলে তোমার
হাত ধরে পালিয়ে যেতে। আমি বড়ই
স্বার্থপর।
-কি হয়েছিল তোমার বাবার?
-বাবার ব্লাড ক্যান্সার ছিলো।
ডা্ক্তার বলেছিলো বড়জোড় তিন
মাস বাচবে। আমি বাবাকে খুব
ভালবাসতাম। মা আমার
কাছে এসে হাতাজোড় করে বললো,
তোর বাবার শেষ ইচ্ছে,
তোকে আকাশের
সাথে বিয়ে দিতে চায়।
আমি বললাম,সম্ভবনা,
তোর বাবা প্রচন্ড অসুস্থ,ডাক্তার
বলছে, তাকে কোন রকম মানুষিক কষ্ট
না দিতে। না হয়,সব
আশা নিরাশা হয়ে যাবে। তুই
রাজি হয়ে যা মা, তোর বাবার
দিকে চেয়ে। আমি সেদিন আমার
সুখের কাছে আমার
বাবাকে বিসর্জন দিতে পারিনি।
তাই আমি আকাশকে বিয়ে করেছি।
-আসলে তোমার দোষ নাই। সবই
নিয়তি। ভাগ্যের নিমর্ম পরিহাস
আমাদের সাথে ঠাট্টামি করেছে।
কি আর বলবো,
শুনেছি বিধাতা নাকি, মানুষের
অমঙ্গল চান না। হয়তো বা এতেই
কল্যাণ নিহিত।
-হয়তো বা।
-হুম,নীলা। কেমন কাটছে বিবাহিত
জীবন? অনেক সুখ না।
-বিবাহিত জীবন! খুব সুখে আছি।
আদর্শগত দিক দিয়ে ছেলে অনেক
সৎ-নিষ্ঠাবান একজন পুলিশ
অফিসার ছিল।
আশা করে ছিলাম,তোমার
না পাবার ধবল
হয়তোবা কাটিয়ে ওঠতে পারবো।
কিন্তু
পারিনি,বিধাতা আমাকে সে সুখ
দেয়নি। আসলে এই
অভাগী যেদিকে যায়,সেদিকেই
সাগর শুকায়।
-কেন, কি হয়েছে?
সেদিন ছিল,রবিবার,বিরো
৪৮ ঘন্টা হরতাল। আমাদের বিয়ের
রাত। রাত ১০টা। আকাশ যখন বাসর
ঘরে ঢুকলো,তখন হঠাৎ ফোন আসলো।
ফোন শেষে , আকাশ বলল,"
আমাকে এখনই
যেতে হবে,একটা লোক খুব
বিপদে পড়েছে। আমি ১ ঘন্টার
মধ্যে আসতেছি।" আর কোন খবর
পাইনি,দীর্ঘ দুইমাস পর
সে এসেছিলো ঠিকই, কিনতু জিবিত
না ,মৃত। আসলে বিধাতার বিচার
চিরন্তন,ঠিক। কাউকে কষ্ট
দিয়ে কখনো সুখি হওয়া যায় না।
-সরি,তোমাকে আমি অনেক ভুল
বুঝেছি। আমাকে ক্ষমা করো।
-তুমি ক্ষমা চাচ্ছো কেন? তোমার
কোন দোষ নেই।
-আর বিয়ে হয়নি তোমার,নীলা?
-আকাশ মারা যাবার পর,শ্বুশর
বাড়ি থেকে চলে আসি। তার ১ মাস
পরই বাবা মারা যায়। বাবার
শোকে মা অজ্ঞান হয়ে যায়,
তারপর আর জ্ঞান ফিরে আসেনি।
তারপর পাশের
প্রাইমারি বিদ্যালয়ে একটা চাকরি নেই।
যা মাইনে পেতাম,
তা দিয়ে মিলাকে নিয়ে চলে যায়।
-আমাকে এসব বলনি কেন?
-কি করবো। আমি যে তোমার
কাছে বড়ই অপরাধী। ২টার বছর ধরে,
তোমার কথা প্রতিরাতে মনে হয়,
কাঁদতে কাঁদতে কত রাত পার
করে দিয়েছি। তবুও তোমার
সামনে এসে দাড়াবার সাহস
পাইনি। আর থাকতে পারলাম না।
অাজ মন শক্ত করে চলে এলাম,
তোমাকে একটু দেখবো বলে।
-তোমার মুখটা এত শুকনা কেন?
সকাল থেকে মনে হয় কিছু খাওনি।
চল কিছু খাওয়া যাক।
-আমার ক্ষুধা লাগেনি।
-আরে চলতো।
............
-আচ্ছা শ্রভ্র,আমার
একটা কথা বলতে মন চাচ্ছে। যদিও
সেই অধিকার আমার নেই।
-বল। সমস্যা নাই।
-
আমি কি নতুনভাবে তোমাকে ভালবাসিত
পারি।
-তা হয় না,নীলা। তা হয়না। যে ক্ষত
মোর হৃদয়ে পড়েছে,তা শোকায়নি।
আবার নতুন করে ক্ষত করতে চাও।
-না শ্রভ্র। আমি আর ক্ষত করবো না।
যেই ক্ষত করেছি, তার
অ্যান্টিবায়েটিক
করবো।
-না নীলা, আমি আর এখন
মেয়েদেরকে বিশ্বাস করি না।
আমাকে ক্ষমা করো।
কাদছো কেন,অশ্রুটা তোমার প্রধান
হাতিয়ার,তাইনা। কেদে লাভ নাই।
আসলে তোমার কাছ থেকে কষ্ট
পাবার পর থেকে,অনেক
কেদেছি,নিজেকে অনেক
বুঝিয়েছি,নিজেকে
আস্তে আস্তে শক্ত করেছি।
-না কাঁদছি না, চোখে কি যেন
পড়েছে। সরি ,তোমাকে এসব বলার
জন্যে। এখন আসি।
-আচ্ছা, ভাল থেকো।
পারলে ভুলে যেয়ো।
-পারবো না।
(বলে নীলা হাটছে,অজানা এক পথে।
যদিও এ পথে সে কতবার এসেছে।
কিন্তু আজ সেই পথটা বড়
অজানা লাগছে। নীলার
বিষাদমাখা মুখের
পাশাপাশি আকাশটা বড়ই
হাসোজ্জল মুখে একমুঠো রোদ
নিয়ে হাসছে। সবই যেন নীলার
প্রতিকূলে,
নীলাকে সান্তনা দেবার মত কেউ
নেই। আজ আবার শনিবার।
নীলা শোনেছে মানুষের শনিবার
নাকি আবার খারাপ যায়।
আত্মহত্যা করবে, তাও
পারছে না কারন বাড়িতে তার
ছোট বোন মিলা আছে।
নীলা মারা গেলে ওকে দেখবে কে!)
-ছয় দিন পর। আজ শুক্রবার।
(বরাবরের মত, নীলা ফজর নামাজ
পরেছে। সে প্রতিদিনিই আল্লাহর
কাছে,শ্রভ্রর জন্যে মঙ্গল
কামনা করে। আজ সে আল্লাহর
কাছে বলেছে,আল্লাহ
তুমি আমাকে কষ্ট দাও।
কিন্তি শ্রভ্রকে কখনো কষ্ট দিওনা।
আর দুচোখের
কিনারা বয়ে গেছে শুধু অথই জল।)
-নামাজ পড়ে ওঠতেই, কলিং বেলের
চির চেনা সুর।
দরজা খুলতেই,যা দেখলাম
তা কখনো বাস্তবে দূরের
কথা কল্পনায় ও ভাবিনি।
দেখলাম, শ্রভ্রর
হাতে একতোরা গোলাপ আর
রজনীগন্ধ্যা।
সে হাটুঘেরে বসে গিয়ে,আমাকে বলল,"
I Love u too নীলা "
তারপর শ্রভ্রকে জড়িয়ে ধরে, ওর
বুকে মাথা রেখে,অনেকক্ষণ
দাড়িয়ে থাকলাম। অদ্ভুত সেই
অনুভূতি, যার স্বাদ আমি আজ প্রথম
পেয়েছি।
-তারপর একটু পর,শ্রভ্র বললো,"
মেডাম, অনেক হয়েছে। এই নিন,এর
ভিতর একটা শাড়ি আছে। যান
পড়ে আসেন। বাহিরে যাব।"
-আমার না এভাবেই তোমার
বুকে মাথা রেখে থাকতে মন
চাচ্ছে। কোথায় যাবা?
-কাজী-অফিসে যাব। আজ
থেকে ২বছর
আগে,বিয়ে না করে প্রেম করেছি,
তাই তোমাকে হারাতে হয়েছে।
এখন বিয়ে করে প্রেম
করবো ,তবে তোমাকে আর
হারাতে হবেনা। বুঝলা?
-হুম। Good Idea, আসছি, তুমি বস।
..............
পার্কে হাটছি পাশাপাশি দুজন ...
-শুভ্র, আজ না আমার অনেক খুশির
দিন। প্রকৃতিটা ও আজ দারুণ লাগছে।
-হুম। কোমর-অবধি তোমার কর্ণ
পতিত চুলের সাজ দেখে,প্রকৃতি আজ
হয়তোবা কিছুটা হিংসুটে হয়ে ওঠেছে।
এমন
একটা রমনী পাশে থাকলে,প্রকৃতির
দিকে তাকানোর সময় কই।
-হুম, তাই বুঝি। আমার
সাথে ফাইজলামি করতেছো,না!
ফাইজলামি না, সত্যি বললাম।
-হাতটা ধর,আর কখনো হাত
ছারবা না,বুঝলা।
-হুম।......
(এভাবেই চলতে লাগলো শ্রভ্র ও
নীলার সুখে ঘেরা স্বর্গ নামক
ভালবাসার নীড়।
ভালবাসাতো এমন একটা জিনিস
যার কোন সংজ্ঞা নেই, শুধু অনুূভব
করা যায়। বর্তমানে ভালবাসার
অবস্থান খুবই করুণ। ভালবাসা নামক
পবিত্র বস্তুকে , লোভ ও
কামনা নামক ছাইপাশ
দিয়ে করা হচ্ছে পদদলিত,
তা নিয়ে আমি বড়ই টেনসিত।
আমাদের নিজেদের
মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে হবে।
সবাই ভাল থাকবেন।)
Post a Comment